শুক্রবার, এপ্রিল 19, 2024
HomeNewsClass 12 Bengali Project || দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রকল্প প্রজেক্ট 2023

Class 12 Bengali Project || দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রকল্প প্রজেক্ট 2023

Class 12 Bengali Project || দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা প্রকল্প প্রজেক্ট 2023

      উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প ১ : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় 

Bengali Project

১ .১ . ভূমিকা –  নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় একজন বাঙালি লেখক ও সাহিত্যিক | বাংলা সাহিত্য কে তিনি তার লেখনীর মধ্য দিয়ে বিশিষ্ট অবদান রেখেছেন | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় আজ আমাদের মধ্যে না থাকলেও উনি ওনার লেখনীর মধ্য দিয়ে আমাদের বাঙালি ও বাংলা লেখার মধ্যে জীবিত আছেন | তিনি বাঙালি ও বাংলা কে উদ্বুদ্ধ করে রেখেছেন | তিনি সাহিত্য সমাজে সমাদৃত হয়েছেন লেখার মধ্য দিয়ে |

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম হয় ৪ ফেব্রুয়ারী ১৯১৮ সালের অবিভক্ত ও বর্তমান বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় যা বর্তমানে বালিয়াডাঙ্গী , ঠাকুরগাঁও নামে পরিচিত | উনার সাহিত্য জগতের প্রতি অবদান অবিস্মরণীয় | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় শুধু একজন সাহিত্যিক বা লেখক হিসাবেই পরিচিত ছিলেন না , ছিলেন অসম্ভব এক প্রবল ভালো মানুষ | উনি বাচ্চাদের  খুব ভালোবাসতেন | 

Change Your Life in 2023
Change Your Life in 2023

১ .২. উদ্দেশ্য – ক ) ভাব ও বিচারধারা বৃদ্ধি পাবে |

খ ) সমাজের প্রতি অবদান |

গ ) সাহিত্য জগতের অবদান |

ঘ ) একজন সাহিত্যিকের জীবনকে অনুসরণ করে ভালো নাগরিক ও সমাজের প্রতি কর্তব্য বোধ কে জাগরিত করা |

ঙ ) সাহিত্যিক জগতে তিনি কিভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন সেগুলি জানা ও নিজেদের জীবনে ওনাকে অনুসরণ করা |

১.৩. প্রকল্পের নীতি – এই প্রকল্পটি নির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতি অনুসরণ করে প্রকল্পিত করা হয়েছে | এই প্রকল্পটি রচনার জন্য নারায়ণ গাঙ্গপাধ্যায়ের রচনাবলী ও অন্যান্য বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছে | যেখান থেকে এই উৎস গুলি নেওয়া হয়েছে সেই সমস্ত উৎস গুলি কে যথাযথ ভাবে সাজিয়ে রচনাটি নির্মাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে | 

১.৪. সীমাবদ্ধতা – ক) প্রকল্পটি নির্মাণের জন্য সময়ের অভাব ছিল |

খ ) আগে কখনো এরকম প্রকল্প নির্মাণ করা হয়নি তাই ভুল ত্রূটি মার্জনীয় | 

গ ) রচনাটির লেখার সময় সম্পূর্ণ উৎস গুলি সংরক্ষিত করা সম্ভব হয়নি |

ঙ ) একজন লেখকের সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত এই টুকু প্রকল্পের মধ্যে লেখা সম্ভব নয় | 

১.৫. প্রকল্প পরিকল্পনা – আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক / শিক্ষিকা মহাশয়ের দ্বারা প্রকল্পটিকে ভালোভাবে সম্পাদন করার জন্য ১০ দিনের একটি পরিকল্পনা করে দেন | এবং এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করার জন্য যে সব সাহিত্য এবং বইয়ের প্রয়োজন হয়েছিল তা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা দিয়েছেন | এছাড়াও এই প্রকল্পটি নির্মাণের জন্য আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক / শিক্ষিকা গণ আমাকে গভীরভাবে সমালোচনামূলক পরামর্শ ও সাহায্য করেছেন |

এবং ওনাদের প্রেরণায় আমি এই প্রকল্পটি নিয়ে গভীরভাবে আগ্রহী হয় ও এই প্রকল্পটির ওপর আমার ভাবনাকে লেখার দ্বারা প্রকাশ করার জন্য উদ্বুদ্ধ হই | এবং এই প্রকল্পটি সুন্দরভাবে লিখে শিক্ষক / শিক্ষিকাদেরকে জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকলাম | 

১.৬ . প্রকল্প রূপায়ণ –  ক ) লেখকের জন্ম এবং বংশ পরিচয় : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় জন্ম গ্রহণ করেন ৪ ফেব্রুয়ারী ১৯১৮ সালের অবিভক্ত বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় | ja বর্তমনে বাংলাদেশে ঠাকুগাঁ জেলা | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য জগতে আসার আগে ওনার প্রকৃত নাম ছিল তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু সাহিত্য জগতে প্রবেশ করার পর উনি নিজের প্রকৃত নাম বদলে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রাখেন এবং পরবর্তীকালে তিনি এই নামেই পরিচিতি লাভ করেন | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের পিতার নাম হলো প্রমথনাথ গঙ্গোপাধ্যায় যিনি একজন পুলিশ ছিলেন | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মাতার নাম অজানা |

খ ) বাল্যকাল ও শিক্ষা জীবন : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাল্যকাল বাংলাদেশের দিনাজপুরের কাটে | এবং তিনি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার রাজেন্দ্র মহাবিদ্যালয়ে স্নাতক উপাধি লাভ করেন | তারপর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতায় চলে আসেন | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪১ সালে M.A  উপাধি লাভ করেন | শুধু M.A করেন তা নয় তিনি ছিলেন অত্যন্ত একজন মেধাবী ছাত্র এবং তিনি প্রথম শ্রেণী তে M.A উপাধি লাভ করেন | এরপর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে Ph.D উপাধি লাভ করেন |

এভাবে তিনি তার ছাত্র জীবন শেষ করে শিক্ষকতার জীবনে প্রবেশ করেন , তিনি প্রথমে জলপাইগুড়ি মহাবিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন | 

গ ) সাহিত্য জীবন : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ছোট থেকেই সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন | তাই তিনি ছোট বেলা থেকেই পয়লা শিশু মাসিকে লেখা লিখতেন | সন্দেশ , পাঠশালা , মুকুল ইত্যাদি মাসিক পত্রিকায় নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা প্রকাশ পেত | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বাঙালির জীবন যাত্রা , নিত্য সমস্যা , রাজনীতি , সমাজ নিয়ে লেখা লিখতেন | ওনার এই লেখা তখনকার দিনের বিখ্যাত সাপ্তাহিক ‘দেশ পত্রিকায়’  লেখা প্রকাশিত হয় | ওনার এই লেখা বাঙালির মনে যথেষ্ট সাড়া ফেলে এবং এই লেখার মধ্যে দিয়েই তিনি সুখ্যাতি অর্জন করেন |

এসবের ম্যধ্যেও তিনি আনন্দবাজার পত্রিকা , বিচিত্র প্রভৃতি পত্রিকাতেও লেখার কাজ করতে থাকেন | এসবের মধ্যে দিয়েই নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য জীবনে প্রবেশ করেন এবং ওনার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় “উপনিবেশ” নামে ভারতবর্ষ নামের একটি মাসিক পত্রিকায় | যা ১৯৪৩ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশ লাভ করে | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বড়োদের জন্য অসংখ্য উপন্যাস , রচনা লিখেছেন | এছাড়াও তিনি শিশুদের জন্যেও অসংখ্য ছোট গল্প লিখেছেন এবং ওনার লেখা ‘টেনিদা’ অমর সৃষ্টি | যা আজও আলোড়ন তৈরি করে রেখেছে | 

  ১.৫ . সাহিত্য কৃতি – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা বিখ্যাত সাহিত্য কৃতী গুলি যেগুলির মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি ও সাহিত্য জগতে আমাদের মন এর আছেন সেগুলি হলো 

নাটক : আগন্তুক , ভীম বধ , বারো ভূতে , রাম মোহন ইত্যাদি তার বিখ্যাত নাটক গুলির রচয়িতা | 

উপন্যাস : উপনিবেশ , শিলা লিপি , মহানন্দা , সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী , লালমাটি , ট্রফি , আলোকপর্ণা প্রভৃতি ওনার বিখ্যাত উপন্যাস যেগুলি বাঙালির মনে-প্রাণে জায়গা করে নিয়েছে | 

প্রবন্ধ : সাহিত্যে ছোটগল্প , ছোটগল্পের সীমারেখা ইত্যাদি | 

কিশোর সাহিত্য : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় শুধু বড়োদের জন্যই রচনা লিখেছেন তা নয় তিনি শিশুদের নিয়েও লিখেছেন টেনিদা , চারমূর্তি , কম্বল নিরুদ্দেশ , অব্যর্থ লক্ষ্যভেদ , রাঘবের জয়যাত্রা ইত্যাদি ওনার শিশুদের প্রতি এক অনন্য অবদান দিয়ে গেছেন | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের শিশুদের প্রতি এক অসাধারণ ভালোবাসা ছিল | তাই তিনি শিশুদের জন্য হলেও বড়োদের মধ্যেও অমর সৃষ্টি “টেনিদা” রচনা করে সাহিত্য জগতে অদ্বিতীয়  , বিস্ময়কর হিসেবে রয়ে গেছে | 

পুরস্কার : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা বা সাহিত্যের প্রতি অবদান তার জন্য আমরা চির রিনি হয়ে থাকবো | ১৯৬৪ সালে তিনি সাহিত্য জগতে অবদানের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন | শিশু সাহিত্যে প্রতি অবদান রাখার জন্য নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ‘রঞ্জিত স্মৃতি পুরস্কার’ জয় করেন | 

১.৬ . মৃত্যু : এই জগতে কোনো কিছুই অমর নয় | তাই নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ও তার ব্যতিক্রম নয় | ৮থ নভেম্বর ১৯৭০ সালে পশ্চিম বঙ্গের রাজধানী কলকাতায় তিনি চিরতরে আমাদের সকলকে ছেড়ে ইহ লোক ত্যাগ করেন | কিন্তু রেখে যান তার সৃষ্টি গুলিকে | 

১.৭. উপসংহার : এই প্রকল্পটি নির্মাণ করার সময় আমি লেখকের প্রতি এবং সমাজের প্রতি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের যা অবদান সেগুলির ওপর আমি নিজেকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট হয়েছি | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই প্রকল্পটি নির্মাণে নিজেকে গর্বিত অনুভব করছি | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব তুলে ধরতে গিয়ে যদি ভুল-ত্রূটি হয়ে থাকে তার জন্য আমি বিশেষ ভাবে অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থী | 

১.৮. কৃতজ্ঞতা স্বীকার : নির্বাচিত এই মহান সাহিত্যিকের কৃতিত্ব সম্পর্কিত তথ্যের জন্য আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক / শিক্ষিকা গণ আমাকে ভীষণভাবে সাহায্য করেছে | তাই তাদের প্রতি আমি চির ঋণী হয়ে থাকবো | 

শিক্ষাথীর স্বাক্ষর …… 

Click Here For PDF

Class 12 Bengali Project  2

 উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প ২ : সত্যজিৎ রায় – জীবন ও সাহিত্য 

ভূমিকাসত্যজিৎ রায় শুধু আমাদের বাংলাতেই নয় উনি পুরো বিশ্বে সমাদৃত | ওনার লেখনী থেকে শুরু করে সবেতেই উনি এক ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন | যা আজ স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে এবং অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে | বিশেষ করে বাংলা সাহিত্য জগতে যে সমস্ত সাহিত্যিকরা রয়েছেন তাদের মধ্যে জনপ্রিয় এবং অনেক গুনের গুণী , প্রতিভাবান নক্ষত্র , শ্রেষ্ঠতম লেখক , সাহিত্যিক , রূপকার এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ভারতবর্ষের নাম উজ্জ্বল করা মহান ব্যক্তি হলেন সত্যজিৎ রায় | সত্যজিৎ রায়কে যেভাবেই বর্ণনা বা উপস্থাপনা করা যাক না কেন হয়তো সে সব ছোটই পরে যাবে ওনার জন্য |

ওনার অবদান , কৃতিত্ব , দৃষ্টিভঙ্গি অতুলনীয় , অবর্ণনীয় | উনি যে শুধু চলচ্চিত্র জগৎকেই ভালোবেসেছেন তা নয় উনি সাহিত্য জগৎকেও ভালোবেসেছেন এবং এক অনন্য রূপ ও খ্যাতি দিয়েছেন | ওনার লেখা ছোট থেকে বড়ো পর্যন্ত সবাইকেই আকৃষ্ট করে তোলে | যেমন চলচ্চিত্র জগতে ওনার মতো মানুষ মেলা দুষ্কর তেমনি সাহিত্য জগতেও ওনার ধরে পাশেও কেউ নেই | তাই তো সত্যজিৎ রায় শুধু বাঙালির নয় সমগ্র বিশ্বের মানুষের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন | উনি বাঙালি জাতির গর্ব , অহংকার | সত্যজিৎ রায় মানেই বাঙালির আবেগ , ভালোবাসা , শ্রদ্ধার , ভক্তির বিশেষ ব্যক্তি | যার নেই কোনো তুলনা এক ব্যক্তিত্ব | যাকে নিয়ে নেই আলোচনার শেষ | 

প্রকল্পের উদ্দেশ্য : এই প্রকল্পটিকে চয়ন করার উদ্দেশ্য গুলি হলো –

ক ) সত্যজিৎ রায়ের অবদান সম্পর্কে জানা |

খ ) সত্যজিৎ রায়ের কৃতিত্ব ও পুরস্কার নিয়ে অবিহিত হওয়া | 

গ ) সাহিত্য জগতে ওনার অবদান | 

ঘ ) বাঙালির মনে প্রাণে থাকার কারণ | 

ঙ ) সত্যজিৎ রায়ের রচনাশৈলী সম্পর্কে অবধারণা | 

চ ) সত্যজিৎ রায়ের রচনাগুলির বৈশিষ্ট্য | 

ছ ) সব শেষে সত্যজিৎ রায়ের ব্যক্তিত্ব ও সাহিত্য কৃতিত্ব গুলিকে ছাত্র / ছাত্রীদের মধ্যে তুলে ধরা এবং সমাজের প্রতি তাদের কি করণীয় সে সব বিষয়ে জানা | 

প্রকল্পের গুরুত্ব : আমার কাছে যে সকল কারণে এই প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ বলে নির্বাচিত হয়েছে , সে সকল কারণ গুলি হলো – 

ক ) এই প্রকল্পটির মধ্য দিয়ে আমরা সত্যজিৎ রায়ের জীবন ও ওনার অবদান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবো | 

খ ) বাঙালি জাতিকে যিনি এতো কিছু দিয়েছেন সেই সত্যজিৎ রায়ের প্রতি আমাদের কি করা উচিত | 

গ ) জীবনে চলার পথে সত্যজিৎ রায় কে অনুসরণ করা | 

ঘ ) সত্যজিৎ রায় দ্বারা কিভাবে আমরা প্রভাবিত তা স্পষ্ট করা | 

ঙ ) সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্য জগৎ ছাড়াও আর অন্য জগৎ গুলির সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান হওয়া | 

চ ) ছাত্র জীবনে সত্যজিৎ রায়কে কিভাবে অনুসরণ করা যেতে পারে | 

প্রকল্পের নীতি : সত্যজিৎ রায়ের এই প্রকল্পটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতি মেনে প্রকল্পিত করা হয়েছে | এই প্রকল্পটি রচনার জন্য সত্যজিৎ রায়ের গ্রন্থসংগ্রহ , রচনাবলী ও অন্যান্য বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছে | সে সব উৎস গুলি কে নিয়ে সুষ্ঠূভাবে সাজিয়ে প্রকল্পটিকে এক বিশেষভাবে নির্মাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে | 

জন্ম ও পরিচয় : সত্যজিৎ রায়ের যদিও কোনো পরিচয়ের প্রয়োজন নেই | সত্যজিৎ রায়কে চেনে না এরকম কোনো বাঙালি পাওয়া যাবে না | তবুও আমরা আমাদের সুবিধার্থে জেনে নেবো সত্যজিৎ রায় সম্পর্কিত তথ্য | ২ মে ১৯২১ সালে তিনি পশ্চিম বঙ্গের রাজধানী কলকাতায় এক বিখ্যাত হিন্দু  পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন | সত্যজিৎ রায়ের পিত ছিলেন সুকুমার রায় ও মাতার নাম সুপ্রভা রায় |

কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষেরা ছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশের | সত্যজিৎ রায়ের বংশে ছিলেন সাহিত্য , শিল্প সমাজে এক খ্যাত নাম রায় পরিবার | তাই সেই সব গুণ সত্যজিৎ রায়ের মধ্যেও আসে | সত্যজিৎ রায়ের কাছের মানুষেরা তাকে মানিক নামেও ডাকত | 

শিক্ষা জীবন : সত্যজিৎ রায় বালিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর তিনি প্রেসিডেন্সি মহাবিদ্যালয় অর্থনীতি নিয়ে স্নাতক উপাধি লাভ করেন | তারপর সত্যজিৎ রায় শান্তিনিকেতনের কলাভবনে ভর্তি হন | সেখানে তিনি সাহিত্য , সংগীত, শিল্প এবং আরো অন্য কাজে নিযুক্ত হন এবং নিজের প্রতিভাকে নিংড়ে নেওয়ার সুযোগ পান |

 

কর্ম জীবন : সত্যজিৎ রায় ১৯৪৩ সালে নিজেকে ছাত্রজীবন থেকে সরিয়ে কর্ম জীবনে পা রাখেন | প্রথমে তিনি ডি জে কিমার নাম এক বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজে নিযুক্ত হন এবং তিনি ধীরে ধীরে সেই সংস্থার পরিচালক পদে নিযুক্ত হন |

চলচ্চিত্র জগৎ ও অবদান : চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায়ের অবদান অনস্বীকার্য্য | উনি ছিলেন চলচ্চিত্র জগতের একজন বহুমুখী-প্রতিভাবান ব্যক্তি যা তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে পরিচয় দিয়েছেন | সত্যজিৎ রায় দ্বারা নির্মিত চলচ্চিত্র “পথের পাঁচালি” ১১ টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে | এবং এটি সত্যজিৎ রায়ের প্রথম চলচ্চিত্র ছিল |

এবং এটি ১৯৫৬ সালে cannes film festival এ পাওয়া Best Human Documentry এর পুরস্কার লাভ করে | সত্যজিৎ রায়ের প্রত্যেকটি চলচ্চিত্র ইতিহাস তৈরি করে | এবং সত্যজিৎ রায়ের কাজ , দিক নির্দেশ , চিত্র গ্রহণ ও শিল্প , কলা-কুশলীদের নিয়ে কাজ করার ভঙ্গি ছিল এক কথা অপূর্ব |

পথের পাঁচালি , অপুর সংসার (১৯৫৯) ও অপরাজিত  (১৯৫৬) সত্যজিৎ রায়ের জীবনের শ্রেষ্ঠ উপলব্ধি এবং এই তিনটি চলচ্চিত্র অপু ত্রয়ী নামেও খ্যাত | সত্যজিৎ রায় জীবনে বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন এবং ৩২ টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন | ১৯৯২ সালে সত্যজিৎ রায় অস্কার পুরস্কার অর্জন করেছিলেন | 

সাহিত্য কৃতী : সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্য জগতে উনি এক অনন্য ও অনবদ্য কৃতী স্থাপন করেছেন | যার কোনোভাবেই তুলনা হয় না | সাহিত্য জগতে ওনার অবদান আজও খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়ে চলেছে | ওনার কিছু মহান সৃষ্টি গুলি হলো ফেলুদা , প্রফেসর শঙ্কু , আত্মজীবনী , অনুবাদ গল্প ইত্যাদি | 

প্রফেসর শঙ্কু : সত্যজিৎ রায়ের এক অনবদ্য কৃতী প্রফেসর শঙ্কু | যা সৃষ্টি করে সত্যজিৎ রায় ছোট থেকে বড়ো সবার মনে সাড়া ফেলে দিয়েছেন | প্রফেসর শঙ্কুর ওপর অসংখ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে | সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শঙ্কু হলেন একজন খ্যাত নামা বাঙালি বৈজ্ঞানিক | যিনি আন্তর্জাতিক জগতেও খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তি | প্রফেসর শঙ্কু হলেন মূলতঃ রহস্য গল্প ও কল্পবিজ্ঞানের বিজ্ঞানী | এবং প্রফেসর শঙ্কুকে নিয়ে সত্যজিৎ রায় ৮ টি গ্রন্থ লেখেন | যা সাহিত্য জগতে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে রয়ে গেছে | 

ফেলুদার গল্পসমূহ : সত্যজিৎ রায়ের আরেকটি চমৎকার ও অবিস্মরণীয় কৃতী তৈরি করে গেছেন সেটি হলো ফেলুদা | ফেলুদা হলেন একজন বাঙালি গোয়েন্দা | তিনি বহুজ্ঞানসম্পন্ন একজন গম্ভীর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা | আর এই ফেলুদাকে নিয়ে সত্যজিৎ রায় তৈরি করেন ১৭ টি উপন্যাস ও ১৮ টি ছোট গল্প | ফেলুদা বাঙালির মনে – প্রাণে জায়গা করে নিয়েছে | ফেলুদাকে নিয়ে অসংখ্য চলচ্চিত্র হয়েছে | 

আত্মজীবনী : সত্যজিৎ রায়কে জানতে হলে ওনার স্বরচিত ‘যখন ছোট ছিলাম’ (১৯৮২) আত্মজীবনীকে অবশ্যই পড়া উচিত তবে আমরা সত্যজিৎ রায়কে আরো কাছ থেকে জানতে পারবো | যদিও সত্যজিৎ রায় এক বিরল প্রতিভার মানুষ | 

প্রবন্ধ সংকলন : সত্যজিৎ রায়ের প্রবন্ধ সঙ্কলনগুলি হলো  আওয়ার ফিল্মস, দেয়ার ফিল্মস (১৯৭৬), বিষয় চলচ্চিত্র (১৯৮২), এবং একেই বলে শুটিং (১৯৭৯) ইত্যাদি | এই সংকলন গুলি কে নিয়ে সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছেন | যা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে খুব আলোচিত | 

কবিতা : ‘তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’ নামের একটি কবিতাও লিখেছেন সত্যজিৎ রায় | 

সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করার পরেও ছিলেন একজন প্রভাবশালী গ্রাফিক ডিজাইনার | সত্যজিৎ রায় যা লিখতেন সে সব গল্প গুলির ছবি নিজেই আঁকতেন |

প্রয়াণ : মৃত্যু যদিও দুঃখের কারণ কিন্তু মৃত্যুকে আটকানোর ক্ষমতা কারো নেই | তাই সত্যজিৎ রায় ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল আমাদের সবাইকে ছেড়ে ইহলোক ত্যাগ করেন | হৃদপিণ্ডের সমস্যাজনিত কারণে তিনি হসপিটালে ভর্তি হন ১৯৯২ সালে কিন্তু এভাবে তিনি চলে যাবেন তা কারোর জানা ছিল না | 

প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ : সত্যজিৎ রায় এক কথায় তিনি  অনন্য | ওনার সাথে কারোই তুলনা হয়না | একদিকে তিনি যেমন সাহিত্যিক ছিলেন অন্যদিকে তিনি একজন মহান চলচ্চিত্র নির্মাতা | একজন অস্কার বিজয়ী | সত্যজিৎ রায় যে কাজ গুলো করেছেন সেগুলি ইতিহাসে অবিস্মরণীয় | উনি বাঙালি জাতি ও ভারতের গর্ব | সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই |

উনি সাহিত্য থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র জগৎ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই প্রতিভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন | সত্যজিৎ রায় আজ আমাদের মধ্যে না থাকলেও তিনি তার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আমাদের বেঁচে আছেন | উনি শিশু মনেও যথেষ্ট সমাদৃত | উনি ওনার লেখার মধ্য দিয়ে শিশু মনের বিকাশ ঘটিয়েছেন | ওনার অবদান অনস্বীকার্য | ওনার কৃতিত্ব আমাদের একান্তই জানা প্রয়োজন ও ওনার নির্দেশিত পথে আমাদের চলা উচিত | 

উপসংহার : সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে ইটা অবশ্যই বলা যেতে পারে তিনি ও তার অবদান সমাজে এক নতুন দিশা দেয় | ওনার জনপ্রিয়তা আজও অক্ষুন্ন | ওনার মতো প্রতিভাবান ব্যক্তি আমাদের আগামী ভবষ্যতের দিশা – নির্দেশ দিয়ে যাবে | এবং সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি বর্গ নির্বিশেষে তিনি সমাদৃত | সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে যতই আলোচনা করা হবে সে সবই কম হয়ে যাবে | 

সংগ্রহীত তথ্য : যে সকল বই বা গ্রন্থ গুলি থেকে সত্যজিৎ রায়ের তথ্য গুলি সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলি হলো 

প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি | 

বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস | 

ইন্টারনেট মাধ্যম 

কৃতজ্ঞাতা স্বীকার : সত্যজিৎ রায়ের জীবন ও সাহিত্য প্রকল্পটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকা গণ আমাকে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য ও পরামর্শ দিয়েছেন | সে জন্য আমি তাদের প্রতি ও আমার বিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো | 

Click Here For PDF

Class 12 Bengali Project   3

উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প ৩ : ফেলুদা ও তার পর্যালোচনা 

ভূমিকা : ফেলুদা বাঙালি জাতিতে একজন গোয়েন্দা তার নাম আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও রয়েছে | এই ফেলুদাকে সৃষ্টি করেন মহান সাহিত্যিক , অস্কার বিজেতা , অসংখ্য প্রতিভায় বিরাজমান , বিশ্ব বিখ্যাত সত্যজিৎ রায় | তিনি ফেলুদাকে এমনভাবে তৈরি করেছেন যে সাহিত্য জগৎ ফেলুদা ছাড়া যেন অসম্পূর্ন | ফেলুদা যদিও কাল্পনিক কিন্তু তাহলেও সত্যজিৎ রায় ফেলুদাকে এমন মূর্তরূপ দিয়েছেন যেন তিনি বাস্তব | তার দ্বিতীয় কোনো বিকল্প যেন নেই | সেই জন্যই সত্যজিৎ রায় আমাদের কাছে এতো মহান সাহিত্যিক | তিনি অবাস্তবকেও বাস্তব করার মতো ক্ষমতা রাখেন |

সত্যজিৎ রায় সাধারণ কিছুর মধ্যেও তিনি অসাধারণ করে তোলেন | ফেলুদা ওরফে প্রদোষ চান্দ্রা মিত্র | ডিসেম্বর মাসের  ১৯৬৫ সালে ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি সন্দেশ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ হয় | প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই ফেলদুয়ার গোয়েন্দাগিরি ধারাবাহিক খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে | সত্যজিৎ রায় শার্লক হোমস এর গোয়েন্দাগিরি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি এই ফেলুদাকে জন্ম দেন | আর এই ফেলুদাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য চলচ্চিত্র , ধারাবহিক | বর্তমানেও সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায় ফেলুদাকে নিয়ে টিভি ধারাবাহিক ও গল্প , উপন্যাস লিখে চলেছেন | 

প্রকল্পের উদ্দেশ্য : আমি যে সকল উদ্দেশ্য গুলিকে সামনে রেখে এই প্রকল্পটি নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছি সেগুলি হলো 

ক ) ফেলুদা চরিত্রটি সত্যজিৎ রায়ের লেখা | 

খ ) ফেলুদা চরিত্রটি জানার সাথে আমরা সত্যজিৎ রায়কেও জানতে পারবো | 

গ ) বর্তমানেও ফেলুদার জনপ্রিয়তা কেমন তা নিয়ে বিশদে জানা | 

ঘ ) গোয়েন্দা গল্প আমাদের বুদ্ধির বিকাশ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে | 

ঙ ) শিক্ষার্থীরা গোয়েন্দা গল্প থেকে কি কি শিক্ষা নিতে পারি তা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা | 

চ ) ফেলুদার ব্যক্তিত্ব আলোচনা করা |

ছ) গোয়েন্দা গল্প বাংলা সাহিত্যে কি কি অবদান রেখেছে তা আলোচনা করা | 

জ) ফেলুদা ধারাবাহিকের রচনাশৈলী বিচার বিবেচনা করা | 

প্রকল্পের গুরুত্ব : যে সকল কারণে ফেলুদা প্রকল্পটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার কাছে মনে হলো সেগুলি হলো – 

ক ) ফেলুদার মধ্য দিয়ে সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়কে জানা | 

খ ) সত্যজিৎ রায়ের লেখার রচনাশৈলী ও ওনার অবদান সম্পর্কে জানা | 

গ ) ফেলুদা চরিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ | 

ঘ ) বাঙালিরা ফেলুদাকে নিয়ে কত টাই উচ্ছ্বসিত তা নিয়ে আলোচনা করা | 

প্রকল্পের নীতি : সত্যজিৎ রায়ের এই ফেলুদা প্রকল্পটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতি মেনে প্রকল্পিত করা হয়েছে | এই প্রকল্পটি রচনার জন্য সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা  ধারাবাহিক সংগ্রহ ও  রচনাবলী ও ফেলুদা সম্পর্কিত অন্যান্য বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছে | সে সব তথ্যগুলি কে নিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে প্রকল্পটিকে এক অন্যমাত্রা নির্মাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে | 

 ফেলুদা : চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব :- ফেলুদা বাংলা সাহিত্য জগতে একজন জনপ্রিয় ও ব্যতিক্রমী কাল্পনিক মানুষ | ফেলুদা ওরফে প্রদোষ চন্দ্র মিত্র | ফেলুদা ধারাবাহিকটি ডিসেম্বর মাসের ১৯৬৫ সালে সন্দেশ পত্রিকায় প্রথম পরকাশিত হয় ” ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি ” নামে | সল্ ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত নানা বাধা বিপত্তিকে পেরিয়ে এই ফেলুদার ধারাবাহিকটি নিয়মিত প্রকাশিত হতো | এতো গুলো বছর পেরিয়ে ৩৫ টি সম্পূর্ণ ও ৪ টি অসম্পূর্ণ ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে |

 

ফেলুদা ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্র : একটি ধারাবহিক কখনোই একজন ব্যক্তিকে নির্ভর করে গড়ে তোলা যায় না টাই এই ধারাবাহিকেও তা অন্যথা হয়নি | ফেলুদা ধারাবাহিকের তপেশরঞ্জন মিত্র ওরফে তাপসে বলেই যাকে ফেলুদা ডাকতেন | তপেশরঞ্জনের বাবা ছিলেন ফেলুদার কাকা | ফেলুদা সেই কাকার বাড়িতেই থাকতেন | সেই বাড়িটি ছিল রজনী সেন রোড , কলকাতা | যদিও এই বাড়িটির কোনো অস্তিত্বই ছিল না | আর তাপসেরঞ্জন ছিলেন ফেলুদার বন্ধু বা সঙ্গী | তিনি ফেলুদার যাবতীয় যাত্রা লিপিবদ্ধ করে রাখতেন | 

লালমোহন গাঙ্গুলী বা লালমোহন বাবু যিনি হলেন ফেলুদার প্রানপ্রিয় বন্ধু | যার ছদ্মনাম হলো জটায়ু | তিনি রোমাঞ্চকর উপন্যাস লিখতেন | তিনি ছিলেন একজন খুব ভালো উপন্যাস লেখক | কিন্তু মানুষ মাত্রই ভুল হয় তাই লালমোহন বাবুর উপন্যাস লেখার সময়ও কিছু ভুল হতো , আর সেই সব ভুল তিনি ফেলুদাকে দিয়ে ঠিক করিয়ে নিতেন | লালমোহন বাবুর উপন্যাস খ্যাতি ছিল পুরো দেশেই | 

এরপর আসে সিধুজ্যাঠা | যিনি হলেন ফেলুদার বাবার প্রিয় বন্ধু | ফেলুদা তাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন | এবং সিধুজ্যাঠার বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি ছিল অপরিসীম | তাই ফেলুদা মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে হাজির হতেন সিধুজ্যাঠার কাছে | আর সিধুজ্যাঠাও খু সহজেই সেই সব সমাধান করেও দিতেন | 

সব শেষে মাগনলাল মেঘরাজ চরিত্রটি | মাগনলাল মেঘরাজ হলো ফেলুদার চির শত্রূ | ফেলুদার সঙ্গে মাগ্যালাল মেঘরাজের ৩ টি ঘটনায় মোকাবিলা হয় তার | 

ফেলুদার ব্যক্তিত্ব : ফেলুদা ছিলেন ২৭ বছর বয়সী একজন যুবক | যার উচ্চতা ৬ ফুটের বেশি | ফেলুদা ছিলেন একজন দক্ষ মার্শাল আর্টিস্ট | ফেলুদা নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি পয়েন্ট থ্রি টু কোল্ট রিভলভার নিজের কাছে রাখতেন | যেটাকে তিনি মজাক করে মগজাস্ত্র বলতেন মাঝে মাঝে | ফেলুদা গোয়েন্দাগিরি করতে কখনো দেশের বাইরেও যেতেন | ফেলুদাকে মাঝে মাঝে গোয়েন্দাগিরি করার জন্য গ্রামে , গঞ্জেও দেখা যেত | কিন্তু তিনি যেখানেই যেতেন তিনি সেই জায়গার সম্পর্কে খুব পরিচিত হয়েই যেতেন | তিনি সব সময় খুব সতর্ক থাকতেন এই হলো ফেলুদা বৈশিষ্ট্য | 

ফেলুদার ব্যক্তিগত জীবন : ফেলুদার যখন ব্যাস ৯ বছর তখনি তার বাবা ও মা মারা যান | কিন্তু ফেলুদার বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক | ফেলুদার বাবা জয়কৃষ্ণ মিত্র ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে গণিত ও সংস্কৃতের শিক্ষক ছিলেন | যেহেতু ফেলুদার বাবা ও মা ছোট বেলায় মারা যায় তাই ফেলুদা তার কাকার কাছেই মানুষ হন | ফেলুদা শুরুতে একটি বেসরকরি সংস্থায় কাজ করতেন | তারপর সেই কাজ ছেড়ে তিনি গোয়েন্দাগিরির কাজ শুরু করেন | আর সেই সঙ্গে ফেলুদার সঙ্গী হলো তোপসে |

যিনি খুব ধূম্ৰপান করতেন | ফেলুদা নিয়মিত শরীরচর্চা করতেন | ফেলুদা খুব বই পড়তে ভালোবাসতেন এবং সাময়িক খবরও রাখতেন যা একজন গোয়েন্দার রাখা খুব জরুরি | 

গল্প ও উপন্যাস : ফেলুদা ধারাবাহিকের সব গুলি উপন্যাস ও গল্প গুলি খুবই জনপ্রিয় তাই সেগুলি জেনে নেবো 

                 গল্প – ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি , কৈলাশ চৌধুরীর পাথর- শারদীয় সন্দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে প্রকাশ পায় | শেয়াল-দেবতা রহস্য ১৯৭০ সালে সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশ হয় | সমাদ্দারের চাবি ১৯৭৩ সালে শারদীয় সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় | লন্ডনে ফেলুদা ১৯৮৯ সালে শারদীয় দেশ পত্রিকায় প্রকাশ পায় | নেপোলিয়নের চিঠি ১৯৮১ সালে শারদীয় সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ইত্যাদি |

উপন্যাস – গ্যাংটকে গন্ডগোল উপন্যাসটি ১৯৭০ সালে শারদীয় সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশ পায় | বাদশাহী আংটি ১৯৬৬-১৯৬৭ সালে সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশ হয় | সোনার কেল্লা ১৯৭১ সালে শারদীয় দেশ পত্রিকায় প্রকাশ পায় | রয়েল বেঙ্গল রহস্য ১৯৭৪ সালে শারদীয় দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় প্রভৃতি |

 

চলচ্চিত্রে ফেলুদা : বর্তমানে ১১ টি কাহানিকে নিয়ে ফেলুদার ওপর চলচ্চিত্র ও ধারাবাহিকের নির্মাণ করা হয়েছে | তার মধ্যে সত্যজিৎ রায় দ্বারা পরিচালিত কিছু চলচ্চিত্র হলো সোনার কেল্লা , জয় বাবা ফেলুনাথ | এবং বর্তমানে সৃজিত মুখোপাধ্যায় দ্বারা ফেলুদার ওপর ওয়েব সিরিজ নির্মাণ কাজ চলছে | আর খুব জনপ্রিয়তাও লাভ করছে | 

তথ্য বিশ্লেষণ : 

ক ) সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি ফেলুদা একটি অমর সৃষ্টি | যা কখনোই ভুলে যাওয়ার নয় | 

খ ) ফেলুদা চরিত্রটিকে এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যেন তিনি বাস্তব | 

গ ) ফেলুদাকে সত্যজিৎ রায় বাঙালি হিসেবেই দেখিয়েছেন এর থেকে বোঝা যায় সত্যজিৎ রায় কতখানি মনে – প্রাণে বাঙালি ছিলেন | 

ঙ ) ফেলুদাকে নিয়ে আমাদের মনে যেন প্রশ্নের কোনো শেষ নেই | 

চ ) ফেলুদাকে নিয়ে শুধু বাংলা ভাষাতেই নয় আরো অনেক ভাষাতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে | 

ছ ) সত্যজিৎ রায় দ্বারা নির্মিত ফেলুদা কিন্তু ঘুরতেও খুব ভালোবাসতেন | 

জ ) ফেলুদা সাম্প্রতিক ব্যাপারেও খুব ওয়াকিবহাল থাকতেন | 

ঝ ) ফেলুদা সব সময় সতর্কতা অবলম্বন করেই চলতেন | 

সীমাবদ্ধতা : প্রকল্পটি নির্মাণের সময় যে সকল সমস্যাগুলির সম্মুখীন হতে হয়েছে সেগুলি হলো 

ক ) ফেলুদা নিয়ে বিশদে বর্ণনা ছাড়া , সংক্ষিপ্তের মধ্যে কোনো বর্ণনা নেই | 

খ ) কোনো উপন্যাসেই ফেলুদার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু নেই | 

গ ) ফেলুদা হলেন বৈচিত্রময় ব্যক্তি তাই ওনার সম্পর্কে বৈচিত্রময় বিষয়গুলি আলোচনা করা সম্ভব হয়নি | 

ঘ ) ফেলুদাকে নিয়ে অনেক চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হলেও সেই সকল অভিনেতাদের নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি | 

ঙ ) ফেলুদার ওপর নির্মিত চলচ্চিত্রগুলিকে নিয়েও খুব বেশি আলোচনা সম্ভব হয়নি | 

উপসংহার : শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয় ফেলুদা গোয়েন্দাকে নিয়ে যে এতো আলোচনা হবে এবং এতো পরিমানে জনপ্রিয়তা লাভ করবে ও সর্বোচ্চ স্থানে থাকবে তা কখনোই হয়তো সত্যজিৎ রায়ও ভেবে দেখেননি | সাহিত্য জগতে ফেলুদা একজন অসাধারণ মানুষ | সত্যজিৎ রায় সাহিত্য জগৎকে সব দিক দিয়েই সমৃদ্ধ করেছেন | 

সংগৃহিত তথ্য : যে সমস্ত জায়গাগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এই প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলি হল 

ফেলুদা রচনা সমগ্র |

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি | 

ফেলুদা উইকিপেডিয়া (ইন্টারনেট ) 

সত্যজিৎ রায় উইকিপেডিয়া (ইন্টারনেট ) 

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :  ফেলুদা ও তার পর্যালোচনা প্রকল্পটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকা গণ আমাকে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য ও পরামর্শ দিয়েছেন | সে জন্য আমি তাদের প্রতি ও আমার বিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো | এবং সত্যজিৎ রায়কে জীবনের পাথেয় হিসেবে মেনে চলার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হলাম | 

Get PDF Click Here

উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প ৪ : বাংলা সাহিত্যে – নারায়ণ দেবনাথ ও তার ভূমিকা 

 ভূমিকা : নারায়ণ দেবনাথের বাংলা সাহিত্য জগতে ওনার অবদানের অন্ত নেই , নেই কোনো সীমানা | নারায়ণ দেবনাথ সীমানার গন্ডি পেরিয়েও দিয়ে গেছেন অনেক কিছু | উনি সাহিত্য জগৎকে নানা বৈচিত্র্য , ভঙ্গিমায় ভরে দিয়েছেন | শুধু বোর্ডের জন্যই যে করেছেন তা নয় উনি ছোটদের জন্যেও করেছেন অনেক কিছু | তিনি মানুষ ছিলেন খুব সাধারণ , খুব সহজেই যে কারো সাথেই মিশে যেতেন | নারায়ণ দেবনাথ ছিলেন বহুমুখী গুণী প্রতিভাসম্পন্ন একজন সাবলীল অসাধারণ ব্যক্তি | 

প্রকল্পের উদ্দেশ্য : নারায়ণ দেবনাথের প্রসঙ্গে এই প্রকল্পটির আমার মুখ্য উদ্দেশ্যগুলি হলো 

ক ) নারায়ণ দেবনাথ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা | 

খ ) সাহিত্য জগতে ওনার অবদানগুলি নিয়ে আলোচনা করা | 

গ ) বর্তমান সমাজে শিক্ষার্থীরা নারায়ণ দেবনাথের থেকে কি কি গ্রহণ করতে পারে |

ঘ ) নারায়ণ দেবনাথের সাহিত্যগুলি কত টা গ্রহণযোগ্যতা রাখে | 

ঙ ) ওনার সাহিত্য জীবন আমাদের ওপর কত টা প্রভাব ফেলেছে টা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা | 

চ ) নারায়ণ দেবনাথের রচনাগুলির প্রাসঙ্গিকতা | 

ছ ) শিশুমনে কত টা প্রভাব বিস্তার করেছেন | 

প্রকল্পের গুরুত্ব : যেগুলি কারণে নারায়ণ দেবনাথের প্রকল্পটি আমার মনে গুরুত্বপূর্ণ মনে হল সেগুলি 

ক ) সাহিত্য জগতের নক্ষত্র নারায়ণ দেবনাথকে জানা |

খ ) নারায়ণ দেবনাথের রচনাশৈলী সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান হওয়া | 

গ ) কেনই বা তিনি শিক্ষার্থীদের মনে এতো গভীরভাবে জায়গা করে আছেন | 

ঘ ) নারায়ণ দেবনাথের রচনাশৈলী অন্য সাহিত্যিকদের থেকে ভিন্ন কেন | 

প্রকল্পের নীতি : নারায়ণ দেবনাথের এই প্রকল্পটি নির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতি মেনে প্রকল্পনা  করা হয়েছে | এই প্রকল্পটি রচনার জন্য নারায়ণ দেবনাথের জীবনী ও  রচনাবলী সম্পর্কিত অন্যান্য বইয়ের ও ইন্টারনেটের সাহায্য নেওয়া হয়েছে | সেই সব তথ্যগুলি কে নিয়ে মার্জিতভাবে  সাজিয়ে প্রকল্পটিকে আমার দ্বারা এক নতুনমাত্রা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে | 

প্রকল্পের বর্ণনা : নারায়ণ দেবনাথকে আমরা জানি না এরকম হয়তো কেউ নেই | নারায়ণ দেবনাথের সম্পর্কেই আমরা এই প্রকল্পে জানবো | বাঙালির মনে ও বাংলা সাহিত্য জগতে তিনি মুখ্যতঃ একজন ব্যাঙ্গচিত্র শিল্পীকার হিসেবেই বিখ্যাত হয়েছেন |

নারায়ণ দেবনাথের দ্বারা রচিত রচনাগুলি হলো হাঁদা – ভোঁদা , নন্টে – ফন্টে , বাটুল দি গ্রেট , ডানপিটে খাঁদু ,  কেমিক্যাল দাদু , কৌশিক রায় ইত্যাদি জনপ্রিয় ব্যঙ্গচিত্রের নির্মাতা তিনি | কিশোরদের জন্য তিনি দিয়ে গেছেন শুকতারা, কিশোর ভারতীর মতো মহান কমিক্স | ২০২১ সালে নারায়ণ দেবনাথকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার | ২০১৩ সালে পশ্চিম বঙ্গ সরকার দ্বারা সাহিত্য একাডেমি ও বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে বিভূষিত হন | 

আরম্ভিক জীবন : এই মহান কমিক্স দাতার জন্ম হয় ২৫ নভেম্বর , ১৯২৫ সালের হাওড়া জেলার শিবপুরে | নারায়ণ দেবনাথের আদি বাড়ি বাংলাদেশে ছিল কিন্তু তিনি জন্মের আগেই স্থায়ীভাবে শিবপুরের বাসিন্দা হয়ে যান | নারায়ণ দেবনাথের পারিবারিক পেশা ছিল স্বর্ণকারের |

তাই তিনি সে সবের মধ্যেও কারুকার্য্য করতেন | ১৯৪০ সালে নারায়ণ দেবনাথ আর্ট মহাবিদ্যালয়ে ৫ বছরের জন্য উপাধি অর্জন করার জন্য ভর্তি হন ঠিকই কিন্তু তিনি টা পুরো করেননি | সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি যোগদান করেন বিজ্ঞাপন সংস্থার কাজে | এবং তিনি সেই সময় প্রচুর ব্যস্ত হয়ে পড়েন | তিনি চলচ্চিত্র পোস্টার , লোগো নির্মাতার কাজ পেতেন এবং তিনি টা খুব মন দিয়েও করতেন | এর ফলে ব্যাঙ্গচিত্র জগতের সম্পর্কে ওনার ধারণা হয়ে যায় | 

কমিক্স জগতের আবির্ভাব : নারায়ণ দেবনাথের বাংলা কমিক্স জগতে আগমন হয় দেব সাহিত্য কুটির সম্পাদক মন্ডলীর আগ্রহে। ওনার দ্বারা রচিত প্রথম কমিক্স হলো হাঁদা – ভোঁদা | যা বাংলা ও বাঙালির বুকে এক অন্য মাত্রা এনে দেয় | যা শুকতারা নামের ছোটদের পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হতো |

এবং এটি ৫৩ সপ্তাহ ধরে শুকতারা পত্রিকায় অবিরত প্রকাশ পেত | এরপর নারায়ণ দেবনাথ বাটুল দি গ্রেট রচনা করেন ১৯৬৫ সালে | এবং এটি ছিল নারায়ণ দেবনাথের জীবনের প্রথম রঙিন কমিক স্ট্রিপ | 2011 সালে নারায়ণ দেবনাথের সৃষ্টি গুলিকে লালমাটি প্রকাশন ওনার নামে নারায়ণ দেবনাথ কমিক্স সমগ্র গ্রন্থটি আবির্ভাব করে | 

নারায়ণ দেবনাথ ও কিশোর ভারতী : পরবর্তীতে নারায়ণ দেবনাথ কিশোর ভারতী পত্রিকার কাজে নিজেকে নিযুক্ত করেন | এবং কিশোর ভারতী পত্রিকায় তিনি সৃষ্টি করেন প্রথম কমিক ‘ম্যাজিশিয়ান পটলচাঁদ’ এটি ছিল একটি ধারাবাহিক কমিক | শুধু এখানেই থেমে থাকেননি নারায়ণ দেবনাথ তিনি অসংখ্য ব্যাঙ্গচিত্র এঁকেছেন | 

রচনাশৈলী : নারায়ণ দেবনাথের রচনাশৈলী অন্য সাহিত্যিকদের তুলনায় ভিন্ন | ওনার রচনাশৈলী তিনি নিজের মতো করেই করতেন এক কথায় বলতে গেলে তিনি স্বতন্ত্র | তিনি অন্যদের মতো কারো ভঙ্গিমায় কোনো কিছুই রচনা করতেন না | নারায়ণ দেবনাথের রচনার বৈশিষ্ট্য হলো শিশু মনে আনন্দ তৈরি করা , বড়দের মনে উৎসাহ প্রদান করা | ওনার রচনা যে কেউ বুঝতে পারে | নারায়ণ দেবনাথের রচনার মধ্যে আছে শিক্ষা , আনন্দ , উৎসাহ , আছে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা | 

টিভি জগতে নারায়ণ দেবনাথ : নারায়ণ দেবনাথের বেশির ভাগ ব্যাঙ্গচিত্র রচনা গুলি টিভি তে প্রদর্শিত হতো | এবং ওনার কমিক্স ও ব্যাঙ্গচিত্র গুলি বড়ো ও বাচ্চাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিল | সব থেকে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে নন্টে – ফন্টে | 

নারায়ণ দেবনাথ ও বর্তমান : বর্তমানে মোবাইলের যুগে আমরা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত | আজ যেখানে বাচ্চারা মোবাইলে খেলতে ব্যস্ত সেখানে নারায়ণ দেবনাথ আমাদের দিয়েছেন কমিক্স ও ব্যঙ্গচিত্রের এক নতুন জগৎ ও আলো | ওনার ব্যাঙ্গচিত্র গুলি বাচ্চাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় | উনি ধরে রেখেছেন আমাদের শিক্ষার জগৎকে | ওনার রচিত কমিক্স গুলি আমাদের প্রতি নিয়ত শিক্ষা দিয়েই চলেছে | বর্তমানে নন্টে – ফন্টে , বাটুল দি গ্রেট , হাঁদা – ভোঁদা ব্যাঙ্গচিত্র গুলি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে | এবং এই সব কমিক্স গুলি অনন্য | 

প্রয়াণ : ১৮ জানুয়ারী ২০২২ সালে নারায়ণ দেবনাথ ৯৬ বছর বয়সে বার্ধক্য জনিত কারণে আমাদের ছেড়ে চলে যান |

উপসংহার : নারায়ণ দেবনাথ দ্বারা রচিত কমিক্স গুলি বহু জনপ্রিয় | বাচ্চা থেকে বড়ো সবার মনে আনন্দের উৎসাহ যোগায় | এবং তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত সাহিত্য নিয়েই ছিলেন | নারায়ণ দেবনাথের মতো সাহিত্যকার পাওয়া খুবই কষ্টের | তিনি যা করে গেছেন টা ফিরিয়ে দেওয়া কখনোই সম্ভব নয় কিন্তু আমরা নারায়ণ দেবনাথের দ্বারা প্রদর্শিত পথে অবশ্যই চলতে পারি | 

কৃতজ্ঞাতা জ্ঞাপন : নারায়ণ দেবনাথ ও তার ভূমিকা প্রকল্পটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকা গণ আমাকে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য ও পরামর্শ দিয়েছেন | সে জন্য আমি তাদের প্রতি ও আমার বিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো | এবং নারায়ণ দেবনাথ দ্বারা প্রদর্শিত পথে এগিয়ে চলার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করার চেষ্টা অক্ষুন্ন রাখবো | 

ই জ্ঞান রাখতেন তা নয় তিনি রাজনৈতিক , সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জ্ঞান খুব ভালোভাবেই রাখতেন | প্রফেসর হলেন তীব্র বুদ্ধিমান , একজন একনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক , সনাতন ইতিহাসকে খুব ভালোবাসতেন | ওনার মধ্যে ছিল না কোনো অহংকারবোধ , তিনি ছিলেন খুব সাধারণ মানুষ যে কারো সাথেই সহজেই মিশে যেতেন |

প্রকল্পের উদ্দেশ্য : আমার কাছে যে সব কারণে প্রফেসর শঙ্কুকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে সেই মুখ্য উদ্দেশ্যগুলি হলো নিম্নরূপ – 

ক ) সত্যজিৎ রায়কে জানা ও ওনার অবদানগুলি সম্পর্কে অভিহিত হওয়া | 

খ ) সত্যজিৎ রায়ের রচনাশৈলী সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা | 

গ ) প্রফেসর শঙ্কু সম্পর্কে জ্ঞান লাভ | 

ঘ ) প্রফেসর শঙ্কুর আবিষ্কার নিয়ে অজানা তথ্যগুলি জানা | 

ঙ ) প্রফেসর শঙ্কুর অবদান গুলি কি কি তা নিয়ে আলোচনা করা |

Click Here For PDF

Class 12 Bengali Project  4

 উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প ৫ : প্রফেসর শঙ্কু 

ভূমিকা : বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র ও বহুবিধ প্রতিভার অধিকারী হলেন সত্যজিৎ রায় | মূলতঃ সত্যজিৎ রায়কে আমরা একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেই জানি | কিন্তু তিনি শুধুই চলচ্চিত্রকার নির্মাতাই ছিলেন না একাধারে তিনি ছিলেন সাহিত্যিক , গ্রাফিক ডিজাইনার , পত্রাকার , ব্যাঙ্গচিত্র নির্মাতা | সত্যজিৎ রায়ের সব সাহিত্য গুলোই ইতিহাস তৈরি করে গেছে |

আর এই সব ইতিহাসের মধ্যে অন্যতম চরিত্র হল প্রফেসর শঙ্কু | বাঙালি ও বাংলার জনমানসে প্রফেসর শঙ্কু খুবই জনপ্রিয় একটি নাম | আর এই প্রফেসর শঙ্কুকে সৃষ্টি করেন মহান সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায় | প্রফেসর শঙ্কু যার পুরো নাম হলো প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু | যিনি হলেন কল্পবিজ্ঞানের বিজ্ঞানী | বাংলা সাহিত্য জগতে বহুল প্রচলিত ও জনপ্রিয়  একটি নাম | প্রফেসর শঙ্কুর ওপর সত্যজিৎ রায় অনেকগুলি ধারাবাহিক রচনা করে গেছেন | ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় প্রফেসর শঙ্কুকে সৃষ্টি করেন | প্রফেসর শঙ্কুর ওপর সত্যজিৎ রায় ৩৮ টি ধারাবাহিক এবং দুঃখের বিষয় হলো ২ টি অপূর্ণ গল্প দিয়ে গেছেন |

হয়তো সত্যজিৎ রায় বেঁচে থাকলে প্রফেসর শঙ্কুর ওপর আরো অনেক অপূর্ণতাকে পূরণ করে দিয়ে যেতেন | যেমন সত্যজিৎ রায় ছিলেন অনেক প্রতিভা সম্পন্ন ব্যক্তি তেমনি তিনি প্রফেসর শঙ্কুকেও বহুমুখী করে ফুটিয়ে তুলেছেন | প্রফেসর শঙ্কুর জ্ঞানভাণ্ডার ছিল বিস্তৃত | তিনি ৬৯ টি ভাষা জানতেন | এবং প্রফেসর শঙ্কু যে শুধু বিজ্ঞানের বিষয়ে

চ ) এতো বড়ো বিজ্ঞানী হয়েও তিনি সাধারণ মানুষ ছিলেন | 

ছ ) প্রফেসর শঙ্কুর মধ্যে দিয়ে দেশাত্মবোধকে জাগৃত করা | 

জ) আমরা শিক্ষার্থীরা প্রফেসর শঙ্কুর থেকে যেগুলি শিক্ষণীয় বিষয় সেগুলি জানা | 

ঝ ) বিজ্ঞান সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করা | 

ঞ) ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা | 

ট) এবং আরো অজানা কিছু সম্পর্কে কৌতূহল দূর করা |

প্রকল্পের গুরুত্ব : আমি প্রফেসর শঙ্কুর এই প্রকল্পটির গুরুত্ববোধ ভীষণভাবে মনে করি | এই প্রকল্পটি নির্বাচনের গুরুত্বগুলি হল – 

ক ) সত্যজিৎ রায় ও ওনার কীর্তি গুলি জানা | 

খ ) প্রফেসর শঙ্কু কাল্পনিক চরিত্র হলেও তা বাস্তবে ফুটিয়ে তোলার মতো সাহিত্য জ্ঞান কতখানি থাকা উচিত | 

গ ) সত্যজিৎ রায় কাল্পনিক চরিত্রকেও এতো জনপ্রিয় করে তোলার কারণ | 

ঘ ) সত্যের সন্ধান করা | 

ঙ ) সত্যজিৎ রায়ের রচনাশৈলী সম্পর্কে জ্ঞান | 

চ ) সত্যজিৎ রায়কে সাহিত্যে আমরা আরো বেশি করে অনুসরণ করতে পারবো | 

ছ ) কল্পবিজ্ঞান নিয়ে জ্ঞান অর্জন করা | 

জ ) সাহিত্যে কল্পবিজ্ঞানের ভূমিকা | 

ঞ) ছাত্র সমাজ কল্পবিজ্ঞান নিয়ে যা ভাবনা রাখে | 

ট ) আমাদের বাংলায় কল্পবিজ্ঞানের ভূমিকা | 

প্রকল্পের নীতি : সত্যজিৎ রায়ের এই প্রফেসর শঙ্কুর প্রকল্পটি পরিকল্পিত নিয়ম ও নীতি মেনে প্রকল্পিত করা হয়েছে | এই প্রকল্পটি রচনার জন্য সত্যজিৎ রায়ের রচিত প্রফেসর শঙ্কু ধারাবাহিক সংগ্রহ ও  রচনাবলী ,  প্রসার শঙ্কু সম্পর্কিত অন্যান্য বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছে | সে সব তথ্যগুলি কে নিয়ে সুনিয়োজিতভাবে সংরচনা করে  প্রকল্পটিকে এক নতুনমাত্রা নির্মাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে | 

প্রফেসর শঙ্কু : ব্যক্তিত্ব ও চরিত্র – প্রফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু মানে প্রফেসর শঙ্কু একজন অত্যন্ত ভালো মানুষ | সত্যজিৎ রায় প্রফেসর শঙ্কু বাবুর জন্মদিন ১৬ বলে উল্লেখিত করেছেন ঠিকই কিন্তু প্রফেসর শঙ্কুর জন্ম সাল উল্লেখ করেননি | প্রফেসর শঙ্কু বাবুর পিত ছিলেন একজন খ্যাতনামা আয়ুর্বেদিক গিরিডির চিকিৎসক | প্রফেসর শঙ্কু বাবু যেমন খুব ভালো লো ছিলেন তেমনি ওনার পিতাও খুব ভালো এবং ভদ্র ব্যক্তি ছিলেন | প্রফেসর শঙ্কু বাবুর পিতা বিনা পয়সায় লোকেদের চিকিৎসা করতেন |

তিনি প্রফেসর শঙ্কুকে ভালোবেসে তিলু বলে ডাকতেন | প্রফেসর শঙ্কু বাবুও তার পিতাকে খুবই ভালোবাসতেন কিন্তু এই ভালোবাসা প্রফেসর শঙ্কুর জীবনে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি | প্রফেসর শঙ্কুর পিতার নাম ছিল ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু | কিন্তু তিনি মাত্র ৫০ বছর বয়সেই মৃত্যু বরণ করেন | প্রফেসর শঙ্কুর প্রপিতামহের নাম বটুকেশ্বর শঙ্কু ও তার এক খুড়তুতো ভাইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন সত্যজিৎ রায় এছাড়া আর কোনো আত্মীয় – স্বজনের কথা উল্লেখ করেননি সত্যজিৎ রায় |

প্রফেসর শঙ্কু ছিলেন অসাধারণ একজন মেধাবী , বিনয়ী ছাত্র | তিনি জীবনে কখনোই প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি | প্রফেসর শঙ্কু মাত্র ১২ বছর বয়সেই মাধ্যমিক পাশ করেন তারপর তিনি ১৪ বছর বয়সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ এক মহাবিদ্যালয় থেকে আইএসসি করেন | ১৬ বছর বয়সে তিনি পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নবিদ্যায় ডাবল অনার্স করেন এবং তিনি খুব কম বয়সেই মাত্র ২০ বছর বয়সেই তিনি স্কটিশ চার্চ মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন |

এতো কিছুর পরেও প্রফেসর শঙ্কু বাবু ছিলেন অবিবাহিত | এবং প্রফেসর শঙ্কু বাবু ছিলেন নির্ভিক , সৎ , উদার , দেশপ্রেমিক একনিষ্ঠ একজন মানুষ | প্রফেসর শঙ্কু বাবু বেদ , উপনিষদ , গীতা ও অন্যান্য শাস্ত্রের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা রাখতেন | এতো কিছুর পরেও প্রফেসর শঙ্কু বাবু কিন্তু ভূত – প্রেত ও তন্ত্র – মংত্র তে বিশ্বাসী ছিলেন | যদিও তিনি জ্যোতিষ শাস্ত্রে বিশ্বাস রাখতেন না | কিন্তু প্রফেসর শঙ্কু বাবুর নাম সারা বিশ্বে প্রচলিত ছিল | প্রফেসর শঙ্কু বাবুকে চিনতেন না এমন কোনো বিজ্ঞানী ছিলেন না |  সুইডিশ আকাদেমি অফ সায়েন্স প্রফেসর শঙ্কু বাবুকে বিশেষ সম্মানে সম্মানিত করেছেন |

তিনি ব্রাজিলের রাটানটান ইনস্টিটিউট থেকে ডক্টরেট উপাধিও লাভ করেছিলেন | প্রফেসর শঙ্কু বাবুর অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছিলেন | কর্মসূত্রে তিনি বহু জায়গা ঘুরেওছেন যেমন সুইডেন , আমেরিকা , ব্রাজিল , ইংল্যান্ড , জাপান , তিব্বত ইত্যাদি শুধু কি তাই গিয়েছেন অজানা – অচেনা অনেক দ্বীপেও এমনকি মঙ্গল গ্রহেও গিয়েছেন তিনি | তাই প্রফেসর শঙ্কু বাবুর মতো মহাজ্ঞানী ও পণ্ডিত মানুষ এই প্রথিবীতে দুষ্কর | প্রফেসর শঙ্কু বাবুর স্থায়ী ঠিকানা নির্দিষ্ট ছিল না | তিনি কখনো কলকাতায় বা কখনো বাইরেও থাকতেন |   

তথ্য বিশ্লেষণ : সত্যজিৎ রায় ও প্রফেসর শঙ্কুকে নিয়ে বিশ্লেষণ করলে যে তথ্যগুলি পাওয়া যায় সেগুলি হল নিম্নরূপ – 

ক ) মহান সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের প্রফেসর শঙ্কু হলেন অমর সৃষ্টি | 

খ ) সত্যজিৎ রায় প্রফেসর শঙ্কুর মধ্য দিয়ে তিনি ভারতের সংস্কৃতিকে দেখিয়েছেন | 

গ ) প্রফেসর শঙ্কুর ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কোনো বর্ণনা সত্যজিৎ রায় দেননি বা কোথাও তা পাওয়া যায়নি | 

ঘ ) প্রফেসর শঙ্কুর মধ্য দিয়ে কল্পবিজ্ঞানের জগৎকে ফুটিয়ে তুলেছেন | 

ঙ ) সত্যজিৎ রায় তার লেখনীর মধ্যে দিয়ে ভ্রমণের জগৎকেও তুলে ধরেছেন | 

চ ) সত্যজিৎ রায় প্রফেসর শঙ্কুর মধ্য দিয়ে যে সকল ধারাবাহিক গুলি লিখেছেন সেগুলি হল প্রফেসর শঙ্কু , ব্যোমযাত্রীর ডায়রি , শঙ্কু একাই ১০০ , প্রোফেসর শঙ্কু ও হাড় , প্রোফেসর শঙ্কু ও আশ্চর্য পুতুল প্রভৃতি | 

ছ ) প্রফেসর শঙ্কু বিজ্ঞানী হলেও তিনি বেদ , উপনিষদ , শাস্ত্রকে কখনোই ভুলে যাননি | 

জ ) তিনি সনাতন ধর্মের প্রতি ছিলেন খুব বিশ্বাসী | 

ঞ) প্রফেসর শঙ্কু ছিলেন একজন নির্ভিক , উদার প্রকৃতির মানুষ | 

ট ) প্রফেসর শঙ্কু সব সময় সত্যের সন্ধান করতেন | 

ঠ) প্রফেসর শঙ্কু কম বয়সেই অভিজ্ঞ ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন | 

ড ) প্রফেসর শঙ্কু বই পড়তে খুবই ভালোবাসতেন | 

সীমাবদ্ধতা : প্রফেসর শঙ্কুর প্রকল্পটি নির্মাণে যে সকল সমস্যাগুলি হয়েছিল সেগুলি হল 

ক ) প্রফেসর শঙ্কুর ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কোনো বর্ণনা সত্যজিৎ রায় দেননি বা কোথাও তা পাওয়া যায়নি |

খ ) সত্যজিৎ রায় তিনি একজন নিজেই বিরাট সাহিত্যের ভান্ডার তাই তাকে নিয়ে বেশি লেখা সম্ভব হয়নি | 

গ ) প্রফেসর শঙ্কুর কত গুলি দিক আমরা নিতে পেরেছি তা আলোচনা করা হয়নি | 

উপসংহার : শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয় প্রফেসর শঙ্কুকে  নিয়ে যে এতো আলোচনা হবে এবং এতো পরিমানে জনপ্রিয়তা লাভ করবে ও সর্বোচ্চ স্থানে থাকবে তা কখনোই হয়তো সত্যজিৎ রায়ও হয়তো কল্পনাও করেননি  | সাহিত্য জগতে প্রফেসর শঙ্কু একজন দেশপ্রেমিক , সৎ , উদার , শ্রদ্ধাবান মানুষ | সত্যজিৎ রায় সাহিত্য জগৎকে সব দিক দিয়েই সমৃদ্ধ করে রেখেছেন |

সংগৃহিত তথ্য : যে সমস্ত জায়গাগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রফেসর শঙ্কুর প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলি হল 

প্রফেসর শঙ্কুর রচনা সমগ্র |

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি | 

প্রফেসর শঙ্কু  উইকিপেডিয়া (ইন্টারনেট ) |

সত্যজিৎ রায় উইকিপেডিয়া (ইন্টারনেট ) |

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :  প্রফেসর শঙ্কু প্রকল্পটি নির্মাণের ক্ষেত্রে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকা গণ আমাকে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাহায্য ও পরামর্শ দিয়েছেন | সে জন্য আমি তাদের প্রতি ও আমার বিদ্যালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো | এবং সত্যজিৎ রায়কে জীবনের পাথেয় হিসেবে মেনে চলার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হলাম | এবং প্রফেসর শঙ্কুর মতো একজন নিষ্ঠাবান , শ্রদ্ধাবান ও আদর্শবান ব্যক্তি হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবো | 

উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প ৬ : দেনা পাওনা নাটক (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

অভিনয়ের চরিত্রগুলি হলো : 

নিরুপমা (নাট্যের নায়িকা) 

রামসুন্দর মিত্র ( নিরুপমার পিতা) ওনার বয়স পঞ্চাশের উপরে । পোশাক – আশাকেই  দরিদ্রতারভাব বোঝা যায় এমন একজন মানুষ। এবং নিরুপমার ভাইয়েরা ও রামসুন্দর মিত্রের  নাতি ও নাতনিরা । 

রায়বাহাদুর ও তার স্ত্রী |

অপরিচিত একজন লোক |  

অপরিচিত একজন পরিচারিকা |

বিয়ের পুরোহিতমশাই |

নিরুপমার বিয়েতে উপস্থিত থাকা পরিচিত কয়েকজন লোক |

  

মঞ্চ ও পরিবেশন  : –  সম্পূর্ণ নাটকটি দু ভাগে উপস্থাপিত করা হবে। প্রথম ভাগে থাকবে  রামসুন্দর মিত্রের বাড়ি এবং দ্বিতীয় ভাগে থাকবে  নিরুপমার শ্বশুর বাড়ির প্রসঙ্গ। অল্প কিছুর মধ্য দিয়েই নাটকটিকে উত্থাপন করা যাবে বা হতে পারে। রামসুন্দর মিত্রের বাড়ি ও নিরুপমার শ্বশুরবাড়িকে বোঝানোর জন্য , নিরুপমার শ্বশুরবাড়ির জন্য মঞ্চে কিছু উন্নত বা দামি চেয়ার এবং  ভালো মানের টেবিল হলেই হয়ে যাবে । চেয়ার ও টেবিলগুলি যেন নাটকের পর সরিয়ে নেওয়া যায় বা প্রয়োজনে ইচ্ছেমতো জায়গায় সরানো যায় তার ব্যবস্থা থাকে বা করতে হবে | 

অন্যদিকে রামসুন্দর মিত্রের বাড়ির অভিনয়মঞ্চের দৃশ্যপটকে তুলে ধরার জন্য সবকটি জিনিসগুলোকে সরিয়ে নাটকমঞ্চটি একদম খালি করতে হবে | কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে রামসুন্দর মিত্রের বাড়ির দৃশ্যকে দেখানোর সময় ওনার বাড়ির এমন দৃশ্য তুলে ধরতে হবে যেন মনে হয় ওনার বাড়ির সব কিছুর মধ্যেই দারিদ্রের চিহ্ন নিশ্চিত ভাবে বোঝানো যায় | তাই খেয়াল রাখা দরকার রামসুন্দর মিত্রের বাড়ির জিনিসগুলো যেন পুরানো হয় | 

এবং অভিনয়মঞ্চের দৃশ্যপটকে বোঝানোর জন্য মঞ্চের  মধ্যে কিছু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকবে এবং দরকার হলে অভিনয়মঞ্চকে বড়ো ও ছোট করা হতে পারে সেদিকেও নজর রাখতে হবে | 

নাটকের প্রথম ভাগ :- 

রামসুন্দর মিত্রের বাড়ি –  রামসুন্দর মিত্র ও ওনার মতোই কয়েকজন লোক বাড়ির বারান্দায়  বসে আছে। 

রামসুন্দর মিত্র :  বুঝলে ভাই , পাঁচজন পুত্রের পর যখন একটি  মেয়ে  হলো তখন আমরা খুব খুশি হলাম | ভালোবেসে তার নাম রাখলাম নিরুপমা | 

পরিচিত ব্যক্তি :  তো দাদা , শুনলাম নাকি তোমার মেয়ে নিরুপমার বিয়ের খবর হচ্ছিলো , সেটার খবর কি হলো  ? 

রামসুন্দর মিত্র :  বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে যে। 

পরিচিত ব্যক্তি : বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো , কি বলছো !

রামসুন্দর মিত্র : অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি , অসংখ্য পাত্রও  দেখলাম। তবুও মনের মতো  পাত্র কোনো মতেই পছন্দ হয়নি। শেষে বড়ো এক রায়বাহাদুরের বাড়ির একটিমাত্র সন্তানের  সঙ্গে সম্বন্ধ ঠিক করেছি। যদিও রায়বাহাদুরের সম্পত্তির বেশির ভাগ অনেক শেষ হয়ে গেছে , তবুও জমিদারের বাড়ি না মেনে উপায় নেই। 

পরিচিত ব্যক্তি : তাও ঠিকই বলেছেন। 

রামসুন্দর মিত্র : কিন্তু ছেলেপক্ষ থেকে দশ হাজার টাকা পণ চেয়েছে  ও আরো কিছু দান এবং জিনিস চেয়েছে । আমি কিছু বিচার – বিবেচনা না করে রাজি হয়ে গেছি। এমন ছেলেকে কোনো মতেই ছাড়া যাবে না , ঠিক বললাম তো ? 

পরিচিত ব্যক্তি : সে ঠিকই , কিন্তু তাবলে এতো টাকা ,এতো খরচা তুমি কোথ থেকে জোগাড় করবে ও  কীভাবে জোগাড় করবে ? 

রামসুন্দর মিত্র : জোগাড় করা হয়ে গেছে। কিন্তু  পণের ছয় – সাত হাজার টাকা এখনও মেটাতে    বাকি আছে। …. তবে কয়জনকে বলেছি ,তবুও আশা করি কিছু একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে নিশ্চই। 

দ্বিতীয় ভাগ : – 

রামসুন্দর মিত্রের বাড়িতে। নাট্যমঞ্চে একটি ছাতনাতলা বানাতে হবে। চারটি কলাগাছ ও কিছু ফুল – পাতার মালার  সাহায্য নিয়ে। এবং এখানে দৃশ্যের মধ্যে নাটকের প্রয়োজনীয়তাকে কেন্দ্র করে নানা কাজে ব্যস্ত বিভিন্ন ব্যক্তিগুলিকে মঞ্চে উপস্থিত করতে হবে সময়ানুসারে। 

নাটকটি শুরু করতেই পুরোহিত মশাই ছাতনাতলায় বিভিন্ন জিনিস ঠিকঠাক করতে ব্যস্ত হয়ে থাকবেন। তারপর ব্যস্ত হয়ে বলবেন – 

পুরোহিত মশাই : রামসুন্দর বাবুকে ডেকে , এবার পাত্রকে এবার এখানে আনুন। 

রামসুন্দর মিত্রবাবু  কিন্তু পুরোহিত মশাইয়ের পাশেই বসে ছিলেন। তিনি সেই জায়গা থেকে যখনই উঠবেন তখনই মঞ্চের বাম দিক দিয়ে রায়বাহাদুরবাবু ও তার পুত্র এবং কিছুজন বরযাত্রীসহ অভিনয়মঞ্চের দৃশ্যপটে প্রবেশ করবেন। তারপর রামসুন্দর মিত্র বরপক্ষকে স্বাগত  করতে এগিয়ে যাবেন। 

রামসুন্দর মিত্র : এসো এসো বাবা , ( খুব বিনয়ের সাথে ) 

রায়বাহাদুরবাবুর পুত্র সামনে এগিয়ে  যাচ্ছিলো। তৎক্ষণাৎ তার পিতা অর্থাৎ রায়বাহাদুরবাবু  তাকে যেতে বারণ করলেন। 

রায়বাহাদুর : ( সন্তানকে  উদ্দেশ্য করে )  থামো ,  এবার ( রামসুন্দর মিত্রাকে  উদ্দেশ্য করে বলেন ) পণের বাকী টাকা আগে শোধ করুন , তারপর বিয়ে নিয়ে ভাবা হবে। 

রামসুন্দর মিত্র ( রায়বাহাদুরবাবুর হাত – পা ধরে কাতর স্বরে ) : আগে শুভকাজটা নিস্তার হয়ে যাক তারপর আমি আপনার পণের টাকা নিশ্চই শোধ করে দেব । 

রায়বাহাদুর ( রামসুন্দর মিত্রের বিনম্র অনুরোধ ত্যাগ করে ) :পণ্যের  টাকা হাতে না পেলে ছেলে  সভায় আসবে না | 

ছেলে অর্থাৎ রায়বাহাদুরবাবুর সন্তান : ( তৎক্ষণাৎ বাবার  অবাধ্য হয়ে ) : এগুলো কী হচ্ছে বাবা ?  কেনাকাটা – দরদাম  আমি ওসব জানি না ,আমি বিয়ে করতেই এসেছি তো , বিয়ে করে তবেই এখান থেকে  যাবো। 

রায়বাহাদুর ( সেই সঙ্গে পুত্র ও রামসুন্দর মিত্র নিজের বন্ধুর ওপর অতি অত্যন্ত রুষ্ঠিত হয়ে বলেন ) : যা ইচ্ছে তুমি বুঝবে। 

( এই কথা বলে উনি নাট্যমঞ্চ ছাড়লেন ) 

তারপর বর অর্থাৎ রায়বাহাদুরের সন্তান তার  পিতার চলে যাওয়ার দৃশ্য কিছু সময় ধরে দেখতে থাকলো , এবং তারপরেই  বিবাহ সভায়  নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেলো | 

পরিচিত বরযাত্রী ক  : দেখেছেন মশাই , আজকালের সন্তানদের ব্যবহার কেমন ! 

পরিচিত  বরযাত্রী খ  : শাস্ত্রজ্ঞান , নীতিজ্ঞান বলতে একেবারেই  কিছুই নেই , তাই …

তৃতীয় ভাগ  : 

রামসুন্দর মিত্রের বাড়ির দৃশ্য। বিবাহ  হয়ে গেছে। তাই  বিয়ের সভার কোনো চিহ্নই  মঞ্চের মধ্যে থাকা চলবে না। অভিনয়মঞ্চের দৃশ্যটিতে প্রথমের দৃশ্যের যেই  ব্যক্তির সাথে রামসুন্দর মিত্র মানে নিরুপমার বাবা কথা বলছিলেন সেই ব্যক্তির আবারো আবির্ভাব ঘটবে এবং উপস্থিত থাকবেন |

পরিচিত ব্যক্তি : রামসুন্দর কেমন আছে তোমার মেয়ে এখন ? খুবই ভালো আছে নিশ্চই ? 

রামসুন্দর মিত্র : ( নিরাশ কণ্ঠের সুরে বলেন  ) : না ভাই  ; বিয়ে তো হলো ঠিকই , তবুও আদরের মেয়েটা আমার কিছুতেই ভালো নেই। 

পরিচিত ব্যক্তি : এরকম কেন ? কি এমন হলো বলো তো একটু ? 

রামসুন্দর মিত্র : আমি মাঝে মাঝেই মেয়েকে দেখতে তার শ্বশুরবাড়ি যাই ঠিকই । কিন্তু সেখানে আমার মেয়ের কোনো গুরুত্ব  নেই ভাই। চাকরগুলোও নিচু চোখে দেখে। আমার আদরের মেয়ে নিরুপমার সাথে শুধু মাত্র পাঁচ মিনিট দেখা করতে দেয় আমাকে । আত্মীয়বাড়িতে এমন অসহ্য অপমান তো সহ্য করা যায়না ভাই। 

সেই জন্যই আমি ঠিক  করে নিয়েছি , পণের আর বাকি ছয় – সাত হাজার টাকা যেমন ভাবেই হোক খুব তাড়াতাড়ি শোধ করার চেষ্টা করছি। 

চতুর্থ দৃশ্য : 

তৃতীয় দৃশ্যের সমান। তবে এবার পরিচিত ব্যক্তিটি আগে থেকেই বসে থাকবে না। উনি অভিনয়মঞ্চের একদিক থেকে আরেকদিকে যাওয়ার সময় রামসুন্দর মিত্রকে ডেকে ওনার সঙ্গে কথা বলবেন। 

রামসুন্দর মিত্র : এই যে ভাই  রামসুন্দর কোথায় যাচ্ছ ? 

পরিচিত ব্যক্তি : সেরকম কোথাও যাচ্ছি না , ( রামসুন্দর মিত্রর দিকে অনেকটা এগিয়ে এসে বলেন ) , ভাই তোমার কি খবর বলো শুনি একটু। 

রামসুন্দর মিত্র : কিছুই খবর ভালো নেই ভাই , পণ্যের টাকাটা এখনো পর্যন্ত শোধ করতে পারছি না। এতো ঋণের বোঝা যে পরিবার ও সংসার চালানো খুবই কষ্টের হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। 

 তাই এখন ভাবছি আমার ছেলেদেরকে না জানিয়েই আমার এই বাড়িটাকেই বেচে দেব বলে ভাবছি তবে দেখি কি করা যায় যদি অন্য কিছু উপায় থাকে। 

পরিচিত ব্যক্তি : এবাবাঃ এসব কি বলো ! তাহলে পরিবার ঘর সংসার নিয়ে থাকবে কোথায় ? 

রামসুন্দর মিত্র : এই বাড়িটি  বেচে দিয়ে এই বাড়িতেই ভাড়া থাকতে হবে মনে হয় …..

যদি তা নাহলে কি  আর অন্য কোনো উপায় নেই ভাই আমার , আদরের মেয়েটার দুঃখ – কষ্ট আর দেখতে পারছি না। ……. শ্বাশুড়ির থেকে কাছ থেকে প্রত্যেকটা দিন বাবার বাড়ির নামে নিন্দা শুনেই চলেছে এবং  আর লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়েটা আমার চোখের জল ফেলেই তার দিন কাটাচ্ছে। খুবই কষ্টে প্রায় তিন হাজার টাকা সুদে ধার করে নিয়েছি। আজকে যাবো সেই পণ্যের টাকাটা দিতে। একটু হলেও তো মেয়েটা আমার শান্তি পাবে। 

পঞ্চম দৃশ্য : 

রায়বাহাদুরের বাড়ির দৃশ্য। অভিনয়মঞ্চে উপস্থিত আছে রামসুন্দর মিত্র এবং তার আদরের একমাত্র মেয়ে নিরুপমা। 

রামসুন্দর মিত্র : কিরে মা কেমন আছিস ? 

নিরুপমা : বাবা আমাকে এখানে একদম কিছুই ভালো লাগছে না। তোমার জামাইও এখন বাইরে। তাই কয়েকদিনের জন্য আমাকে বাড়ি নিয়ে চাল বাবা। 

রামসুন্দর মিত্র : হ্যাঁরে মা, এবার তোকে আমি বাড়ি নিয়ে যাব। 

ঠিক এরকম  সময় রায়বাহাদুর ও তার স্ত্রী অভিনয়মঞ্চে প্রবেশ করেন। এবং তাদের অভিনয়মঞ্চে প্রবেশ করা দেখে রামসুন্দর মিত্র উঠে দাড়ান এবং নিরুপমা সেখান থেকে চলে যায়। 

রামসুন্দর মিত্র : ( হাত জোর করে অনুনয় – বিনয়ের সাথে ) আজ্ঞে , বলুন বেয়াইমশাই কেমন আছেন আপনারা ? 

রায়বাহাদুর ও তার স্ত্রী  রামসুন্দরের কথার ভালোভাবে কোনো উত্তর দিলেন না। 

রামসুন্দর মিত্র : হ্যাঁ , হ্যাঁ বেয়াইমশাই , সেই পণ্যের টাকাটা বাকি আছে কিন্তু প্রত্যেকদিন মনে করি , কিন্তু সময়কালে আর সেভাবে মনে থাকে কই। বেয়াইমশাই আর ভালোভাবে মনে কি থাকে , দিন দিন বুড়ো তো হচ্ছি যে ( না চাইতেও জোর করে হাঁসার চেষ্টা করেন। ) 

তারপর খুব দ্বিধা ভরা মনে  সংকোচের সহিত নিজের পকেট থেকে তিনখানা নোট বার করে বেয়াইমশাইয়ের হাতে তুলে দিলেন।এবং বেয়াইমশাই সেই টাকাটা নিয়ে সেগুলো গুনে দেখলেন ও তারপর একটু  হেঁসে উঠলেন। 

রায়বাহাদুর : থাক বেয়াইমশাই আমাকে ক্ষমা করবেন , আমি এই সামান্য কিছু টাকা নিয়ে হাত গন্ধ করতে পারবো না। 

রামসুন্দর মিত্র : মন থেকে খুব ভেঙে পড়লেন। 

রামসুন্দর মিত্র : ( খুব দ্বিধার সহিত বলেন ) : এরপরের বার পুরো টাকাটাই নিয়ে আসবো। 

রায়বাহাদুর : ( সেই কথায় কান না দিয়ে বলেন ) বেয়াইমশাই আপনার আরো কিছু কি বলার আছে ? 

রামসুন্দর মিত্র : হ্যাঁ , বলছিলাম , আমার মেয়েকে যদি কয়েকদিনের জন্য বাড়ি নিয়ে যেতে পারতাম ? 

রায়বাহাদুর : না , তা আর এখন কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।         

রামসুন্দর মিত্র : কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে এবং হাতে সেই পণ্যের তিনটি নোট আবারও পকেটে ঢুকিয়ে রাখলেন। 

ষষ্ঠ দৃশ্য :- 

রামসুন্দর মিত্রের বাড়ির দৃশ্য। অভিনয়মঞ্চে তিনি একাই  বসে আছেন রামসুন্দর। এরপর নাট্যমঞ্চে প্রবেশ হলো রামসুন্দর মিত্রের নাতির । 

রামসুন্দরের নাতি : দাদু আমার জন্য গাড়ি কিনতে কবে যাচ্ছো ? খেলা গাড়ি নিতে ? 

রামসুন্দর মিত্র : নিরুত্তর ও হতবাক হয়ে চেয়ে থাকলেন। 

রামসুন্দর মিত্রের নাতি : পূজো তো চলেই এলো দাদু ,  আমাকে একটা খেলনা গাড়ি কিনে দাও না ! 

তারপর রামসুন্দর মিত্রের এক নাতনির প্রবেশ হলো।

রামসুন্দর মিত্রের নাতনি : পুজোয় বেরোনোর মতো একটাও  ভালো কোনো কাপড় নেই আমার কাছ। দাও না দাদু আমাকে একটা ভালো কাপড় কিনে ! 

রামসুন্দর মিত্র : ( অতি বিরক্তকর স্বরে বলেন ) উফ্ফ যা না তোরা এখান থেকে , যাও  বলছি ! 

রামসুন্দর মিত্রের নাতি ও নাতনি অতি বিষন্নভাবে অভিনয়মঞ্চ থেকে প্রস্থান করে। রামসুন্দর মিত্র মাথায় হাত দিয়ে সেখানেই বসে থাকলেন । ঠিক তারপর রামসুন্দর মিত্রের তিন পুত্রের আগমন ঘটে। 

প্রথম সন্তান : বাবা তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল ? 

রামসুন্দর মিত্র : ( হতবাক চাউনিতে ) তোদের আবার কী কথা ছিল ? 

দ্বিতীয় সন্তান ( রামসুন্দর মিত্রের কাছে এসে ) : বাবা তুমি যতই গোপন চেষ্টা করো আমরা কিন্তু সব জেনে গেছি তুমি এই বাড়িটা বিক্রি করে দিতে চাইছ । একটুও  আমাদের কথা ভেবেছ কি ?  

রামসুন্দর মিত্র : ( রাগ এর মূর্তি হয়ে বলেন ) : তোদের জন্য আমি কি নরকগামী হব ? আমাকে তোরা কি সত্য পালন করতে দিবি না ? 

যাঃ সবগুলোই  নিকম্মার দল , বেরিয়ে যা এখনই বেকার সব ……. 

রামসুন্দর মিত্রের সন্তানরা সবাই পুত্ররা  অভিনয়মঞ্চ থেকে বেরিয়ে গেলো | 

রামসুন্দর মিত্র : না ,যেভাবেই হোক সব নাগালের বাইরে যাওয়ার আগেই  আমাকে কিছু করে হলেও আজকেই বেয়ানমশাই বাড়িতে পণ্যের টাকাটা পৌঁছে দিতেই হবে। বাড়িটা তো বেচা  হয়েই গেছে। এই অপদার্থ গুলো তো এখনো জানেই না। জানলেও যে কি করবে ?  নাহ , না , আমাকে আজকে কিছু একটা করতেই হবে।

সপ্তম দৃশ্য :- 

রায়বাহাদুর মশাইয়ের বাড়ি। এক চাকর  অভিনয়মঞ্চে পরে থাকা আসবাবপত্রগুলি পরিষ্কার করছিলো। বুকফুলিয়ে রামসুন্দর মিত্রের আগমন ঘটে। 

রামসুন্দর মিত্র : ( চাকরের উদ্দেশ্যে বলেন ) বেয়াইমশাই আজ বাড়িতে নেই নাকি ? 

চাকরটি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে এবং নিরুত্তরভাবে থাকেন। এই সময় অভিনয়মঞ্চে নিরুপমার আগমন ঘটে। 

নিরুপমা : একি ! বাবা তুমি কখন এলে ? 

( এই কথা বলা মাত্রই  অভিনয়মঞ্চে রামসুন্দর মিত্রের তিন সন্তান এবং নাতি ও নাতনির আগমন হয়। সবাই হাঁফাচ্ছে। )

প্রথম সন্তান : বাবা তুমি এসব কি করলে ! আমাদের সবাইকে যে এবার পথে বসালে। 

দ্বিতীয় সন্তান : বাবা আমরা সব জেনে গেছি , তুমি বাড়ি বেচে দিয়েছো। 

তৃতীয় সন্তান : বাড়ি বিক্রির সেই টাকাগুলি তুমি নিরুপমার শ্বশুরবাড়িতে কন্যাপণ দিতে এসেছ তাই তো ! 

নিরুপমা ( তার বাবার উপর চিৎকার করে ওঠে ) : এ’কি বাবা তুমি কি করেছো এসব , বাবা ! তুমি যদি আর এক পয়সাও  আমার শ্বশুরবাড়িতে দাও তাহলে আর তুমি আর আমাকে কখনোই দেখতে পাবে না তোমার দিব্যি দিয়ে বললাম |

রামসুন্দর মিত্র : ছি: মা , অমন কথা বলতে নেই রে। এই পণ্যের টাকাটা যদি আমি নাই বা দিতে পারি তাহলে তো তোর বাবার অপমান রে , আর তোর তো বটেই। 

নিরুপমা : না বাবা , টাকা যদি দাও , তাহলেই অপমান। আমার কি কোনো মান – মর্যাদা বলতে কিছু নেই। আমি কি শুধু একটা টাকার বোঝা , যতক্ষণ টাকা আছে , ততক্ষন আমার দাম ! 

না বাবা , এই টাকা দিয়ে তুমি আমাকে আর অপমান কোরো না। আর তাছাড়া , আমার স্বামী তো এই টাকা চায় না। 

রামসুন্দর মিত্র : তা হলে তো তোমাকে বাড়িতে যেতে দেবে না , মা। 

নিরুপমা : না দেয় যদি তো কি করবে বলো। তুমিও আর নিয়ে যেতে চেও না বাবা।       

অষ্টম দৃশ্য : –

নিরুপমার শ্বশুরবাড়িতে : মানে রায়বাহাদুর মশাইয়ের বাড়ি। অভিনয়মঞ্চে রায়বাহাদুরমশাই একটি চেয়ারে বসে আছেন। ঠিক এমন সময় ওনার স্ত্রী হন্তদন্ত হয়ে অভিনয়মঞ্চে আগমন করলেন। 

রায়বাহাদুরের স্ত্রী : শুনেছ গো ? 

রায়বাহাদুর : কী হয়েছে বলো ? 

রায়বাহাদুরের স্ত্রী : বৌমার বাবা আজকে পণ্যের টাকা দিতে এসেছিল। কিন্তু তোমার বৌমা তার বাবাকে বলেছে পণ্যের টাকা দিলে নাকি তার অপমান হচ্ছে। 

রায়বাহাদুর :  সেকি কথা , এত বড় কথা ! আমাদেরকে এইভাবে অপমান করছে ! 

পরিচিত পরিচারিকা : গিন্নিমা , আপনার বড় বৌমার শরীরটা খুব খারাপ করেছে , মনে হচ্ছে ডাক্তার ডাকতে হবে। 

রায়বাহাদুরের স্ত্রী : যত্তসব নাটক , কোনো কিছু ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন নেই। 

( পরিচিত পরিচারিকা সেখান থেকে বেরিয়ে যায় ও কিছুক্ষন পর অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ফিরে আসে। ) 

পরিচিত পরিচারিকা : গিন্নিমা , ( কান্নার সুরে বলে ) নিরুপমা আর নেই গো……

নবম দৃশ্য : – 

 রায়বাহাদুরমশাইয়ের বাড়ি। অভিনয়মঞ্চে রায়বাহাদুরমশাই একটি চেয়ারে বসে থেকে । এবং পাশে ওনার স্ত্রী। 

রায়বাহাদুর : দেখলে তো গিন্নি , নিরুপমার শ্রাদ্ধ – শান্তি কিরকম ধুম – ধাম করে দিলাম। পুরো জেলায় ধন্য ধন্য করছে সবাই । চন্দন কাঠের চিতা – দেখেছে এই এরিয়ার  কাউকে ? (প্রসন্ন হয়ে) এরকম বড়ো করে শ্রাদ্ধ শুধুমাত্র রায়বাহাদুর বাড়িতেই সম্ভব। 

রায়বাহাদুরের স্ত্রী : তা আর বলতে বাকি আছে ! ও হ্যাঁ , খোকাকে চিঠি লিখে দাও , তার জন্য আবার নতুন করে মেয়ে দেখা চলছে , এবার বিশ হাজার টাকা পণ হাতে – নাতে আদায় করতে হবে। 

Click Here For PDF

Class 12 Bengali Project উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রকল্প ৭ :

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট টেনিদা 

ভূমিকা : নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্য জগতের একটি উজ্জ্বল ও অবিস্মরণীয় নাম | বাংলা সাহিত্য জগতে ওনার অবদান কখনোই ভুলার নয় | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তি ও লেখক খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনা ও লেখালেখি খুবই ভালোবাসতেন | যেহেতু তিনি ছোট থেকেই লেখালেখি করতেন তাই তার লেখা পয়লা শিশু মাসিক পত্রিকা তেও তিনি নিয়মিত লিখতেন | সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকা তেও তিনি সুনন্দর জার্নাল লিখতেন |

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ছোট ও বড়ো সবার জন্যই তিনি লিখতেন | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ৪ ফেব্রুয়ারী ১৯১৮ সালে অবিভক্ত বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের পিতা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা ওনার পিতার নাম হলো প্রমথ নাথ গঙ্গোপাধ্যায় | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রয়াণ হয় পশ্চিম বঙ্গের রাজধানী কলকাতায় ৮ নভেম্বর ১৯৭০ সালে | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্য জগতের বিখ্যাত সৃষ্টি টেনিদা উপন্যাস | যা বাংলা সাহিত্য জগতে স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে |

প্রকল্পের গুরুত্ব : 

ক ) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অবদান সম্পর্কে জানা | 

খ ) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের রেচনশৈলীকে জানা | 

গ ) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাবধারা ও বিচার সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করা | 

ঘ ) টেনিদা ও তার সম্পর্কে জানা |

ঙ ) টেনিদা উপন্যাসের উদ্ভাবন এর ইতিহাস | 

চ ) বাংলা সাহিত্যে টেনিদার গুরুত্ব | 

ছ ) বাংলা সাহিত্য জগতে টেনিদার জনপ্রিয়তার কারণ |

 

প্রকল্পের নীতি : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সৃষ্ট টেনিদা এই প্রকল্পটি নির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতি অনুসরণ করে প্রকল্পিত করা হয়েছে | এই প্রকল্পটি রচনার জন্য নারায়ণ গাঙ্গপাধ্যায়ের রচনাবলী ও টেনিদা সমগ্র এবং অন্যান্য পাঠ্য পুস্তকের সাহায্য নেওয়া হয়েছে | যেখান থেকে এই উৎস গুলি নেওয়া হয়েছে সেই সমস্ত উৎস গুলি কে যথাযথ ভাবে সাজিয়ে রচনাটি নির্মাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে | 

প্রকল্প রূপায়ণ : টেনিদা বাংলা সাহিত্যের একটি বিখ্যাত ও খুব জনপ্রিয় নাম | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় দ্বারা সৃষ্ট টেনিদা, এই কাল্পনিক চরিত্রটিকেও যেন আমাদের সামনে বাস্তব করে তুলে ধরেছেন | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনাশৈলী খুবই সহজ ও সরল তিনি কল্পনার জগৎকেও বাস্তব করার মতো ক্ষমতা রাখেন | ভজহরি মুখার্জী জেক ভালোবেসে সবাই টেনি বা টেনিদা বলতো |

  টেনিদার বাসস্থান হলো পটলডাঙার উত্তর কলকাতায় যে যুবক ছেলেদের নেতা এক কথায় বলতে গেলে টেনিদা যুবক ছেলেদের নেতৃত্ব দেন করতেন | টেনিদা পড়াশোনায় খুব একটা ভালো ছিল না তবে সে ছিল খুব বড়ো মনের অধিকারী | কাজের দিক থেকে সে কখনোই পিছিয়ে থাকতো না | শুধু পড়াশোনাতেই কমজোর ছিল সে | টেনিদা সাত বার পরীক্ষা দেওয়ার পর মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেছিল | টেনিদা বিখ্যাত ছিল কারণ তার নাকটা ছিল খুব উঁচু | পাড়ার মধ্যে টেনিদাকে ছাড়া কারোই যেন ভালোই লাগতো না |

টেনিদা পড়াশোনাতে ভালো নয় ঠিকই কিন্তু কারোর বিপদে টেনিদা সব সময় এগিয়ে থাকতো | মুখে থাকতো না ক্লান্তির কোনো ছাপ |

দিন – রাত যার যখনি কোনো বিপদ হোক না কেন কাউকে পাওয়া না গেলেও টেনিদাকে সব সময় পাওয়া যেত | টেনিদা খেলার মাঠেও খুব ভালো খেলতো | ফুটবলের মাঠে যেমন তার কোনো জুড়ি মেলা ভার ছিল তেমনি ক্রিকেটকেও খুব ভালোবাসতো ও খুব ভালো খেলতেনও | পাড়ার ছেলেদের যখন গল্প শোনাতেন তখন টেনিদার থেকে ভালো আর কেউ গল্প শোনাতে পারতো না | টেনিদার বিশেষ গুণ হলো সে সবার কাছেই ছিল প্রিয় | তার বিখ্যাত সংলাপ হলো  ‘ডি-লা গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস ইয়াক ইয়াক’ | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৫৭ সালে টেনিদার ওপর প্রথম উপন্যাস লেখেন অভ্যুদয় প্রকাশ মন্দির গ্রন্থাগার থেকে যার নাম দেয় “চার মূর্তি” |

চার মূর্তি প্রকাশ পাওয়ার ঠিক ৩ বছর পর ১৯৬০ সালে আবারও অভ্যুদয় প্রকাশ মন্দির গ্রন্থাগার থেকেই চার মূর্তির অভিযান উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় |এবং এখানেই জানা যায় টেনিদার আধিকারিক নাম ও টেনিদার জনপ্রিয় সংলাপ |

টেনিদার ওপর নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় অনেক গুলি উপন্যাস লিখেছেন সেগুলি হলো চার মূর্তি , চার মূর্তির অভিযান , কম্বল নিরুদ্দেশ , ঝাউ বাংলোর রহস্য , টেনিদা আর সিন্ধুঘোটক | কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো টেনিদার অনেক অসমাপ্ত গল্প গুলো সমাপ্ত না তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান | তাই পাঠকদের মনে টেনিদাকে নিয়ে রয়ে যায় নানা প্রশ্ন এবং তারপর সেই টেনিদার গল্প গুলোকে সম্পূর্ণ করার কাজে হাত দেন ওনার স্ত্রী | ওনার স্ত্রীর লেখা উপন্যাস হলো টেনিদার আজলাভ এবং বেশ কয়েকটি ছোট গল্প | 

টেনিদাকে নিয়ে ছোট গল্পগুলি : টেনিদা ওরফে ভজহরি মুখার্জিকে নিয়ে অনেক গুলি ছোট গল্পও লেখেছেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় | সেগুলিও বাংলা সাহিত্যে খুবই জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে , যেমন ঢাউস , একটি ফুটবল ম্যাচ , পরের উপকার করিও না , সাংঘাতিক , টিকটিকির ল্যাজ , কাঁকড়াবিছে , ক্যামোফ্লেজ , টেনিদা আর ইয়েতি প্রভৃতি ছোট গল্পগুলির  খুব চাহিদা | 

নাটক : সাহিত্য জগতের সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় কাল্পনিক টেনিদাকে নিয়ে তিনি একটি নাটকও রচনা করেছেন | সেই নাটকটির নাম হলো ‘পরের উপকার করিও না’ | এই নাটকে নাট্যকার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় টেনিদাকে টেনিদা রূপে উপস্থাপিত করেননি বরং তিনি টেনিদাকে ভজহরি নামেই উপস্থাপন করেছেন | এছাড়াও নাটকের মধ্যে আর যে সকল চরিত্রগুলি আছেন তারাও টেনিদাকে , টেনিদা নামে না সম্বোধন করে ভজাদা নাম ধরে সম্বোধন করতেন | আসলে এই নামে সম্বোধন করা মানে টেনিদাকে সম্মান দিতেন | 

টেনিদাকে নিয়ে অন্য জগৎগুলি : টেনিদা যে শুধু সাহিত্য জগতেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয় | টেনিদা এতো টাই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যে টেনিদাকে নিয়ে রচিত হয়েছে আরো অনেক কিছু যেমন কমিক্স , চলচ্চিত্র এমনকি ব্যাঙ্গচিত্রও  |  টেনিদার কমিক্স গুলি শুরুতে আনন্দমেলাতেও প্রকাশ করা হতো পরবর্তীকালে সেই কমিক্সগুলি এবেলা পত্রিকাতেও প্রকাশ পায় এবং নিয়মিত প্রকাশ পেতো আর প্রচন্ড পরিমানে জনপ্রিতাও লাভ করেছিল এই টেনিদার কমিক্স | 

অভিনয় জগৎ : নারায়ন গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট টেনিয়াদর ওপর অনেকগুলি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে | ১৯৭৮ সালে চারমূর্তি নামের একটি চলচ্চিত্র প্রকাশ পায় সেই চলচ্চিত্রে টেনিদার ভূমিকাতে অভিনয় করেছেন চিন্ময় রায় | চারমূর্তির অভিযান কাহিনীকে অবলম্বন করে 2011 সালে টেনিদা নামের একটি চলচ্চিত্র প্রকাশ করা হয় যেখানে টেনিদার ভূমিকায় অভিনয় করেন শুভাশীষ মুখোপাধ্যায় | 

প্রকল্পের উদ্দেশ্য : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট টেনিদা প্রকল্পটিকে বেছে নেওয়ার আমার একমাত্র উদ্দেশ্য গুলি হলো – 

ক ) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সৃষ্টি ও অবদানগুলি তুলে ধরা | 

খ ) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনাশৈলীর মাধ্যমে আমাদের রচনাশৈলীকেও বিকাশ করা | 

গ ) একজন মহান সাহিত্যিকের মহান সৃষ্টিকে জানা | 

ঘ ) অন্য সাহিত্যিকদের থেকে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় আলাদা কেন তা বোধ হওয়া | 

ঙ ) টেনিদার মধ্যে দিয়ে আমাদের বোধশক্তিকে বৃদ্ধি করা | 

চ ) টেনিদার মধ্য দিয়ে আমরাও যেন কোনো কিছু কাজে পিছিয়ে না থাকি তার জন্য চেষ্টারত হওয়া | 

তথ্য বিশ্লেষণ : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ও টেনিদাকে নিয়ে আলোচনা করলে যে সকল তথ্যগুলি উঠে আসে সেগুলি হলো –

ক ) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনাশৈলী সব ধরনের মানুষকেই মুগ্ধ করে |

খ ) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট টেনিদাকে এতটাই জনপ্রিয় করে তোলে যে তাতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে বাধ্য হয়ে যায় | 

গ ) টেনিদা পড়াশুনায় ভালো নাহলেও মানুষ হিসেবে সে খুবই ভালো | 

ঘ ) টেনিদা খুব বড়ো মনের ব্যক্তি |

ঙ ) টেনিদা উদার প্রকৃতির লোক | 

চ ) টেনিদা সবার বিপদে সব সময় সাহায্য করতে উৎসুক থাকেন | 

ছ ) টেনিদা খুব ভালো গল্প বলতেন |

জ ) টেনিদা একজন খুবই ভালো উচ্চমানের খেলোয়াড় |

সীমাবদ্ধতা : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট টেনিদা প্রকল্পটিতে যে সকল সীমাবদ্ধতাগুলো রয়েছে সেগুলি হলো – 

ক ) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় একজন মহান সাহিত্যিক ওনার সাহিত্য জগৎ অনেক বড়ো তাই তাকে নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করা সম্ভব হয়নি |

খ ) টেনিদার জন্ম কবে হয়েছিল সে ব্যাপারে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বিশেষ কিছু বলেননি | 

গ ) টেনিদার বিদ্যালয় জীবন কেমন কেটেছিল সে ব্যাপারেও কিছু লেখেননি | 

ঘ ) টেনিদার বাবা – মা কবে মারা সে নিয়ে কিছু নেই | 

ঙ ) টেনিদার সংসারে কে কে ছিল তাও সঠিক জানা যায়নি |

উপসংহার : নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট টেনিদা যে বাংলা সাহিত্যে এতো জনপ্রিয়তা লাভ করবে তা সত্যি ভাবার বিষয় | বাংলা ও বাঙালির মনে টেনিদা মানেই নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় | নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় যিনি কল্পনাকেও বাস্তব করিয়ে দিতে পারেন | তিনি কল্পনা জগৎ থেকে অনেক উপরে |

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের টেনিদা ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন যা আগামী প্রজন্মকে সাহিত্য জগতে উৎসাহ যোগাবে | সাহিত্য জগতে নতুন উর্জা সৃষ্টি করবে | আগামী ভবিষ্যৎকে পথের আলো খুঁজতে সাহায্য করবে | তাদের বাঁধার হাত থেকে বাঁচাবে | এবং নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্য চিরকাল বাংলার সাহিত্য জগৎকে এক নতুন আলোর দিশা এনে দেবে ও শিক্ষা জগতের অবিস্মরণীয় কৃতিত্ব হয়ে থাকবে | 

সংগৃহিত তথ্য : যে সমস্ত জায়গাগুলি থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় সৃষ্ট টেনিদা  প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলি হল 

টেনিদা সমগ্র |

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি | 

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় মুক্ত বিশ্বকোষ 

টেনিদা মুক্ত বিশ্বকোষ 

Class 12 Bengali Project  

 

RELATED ARTICLES

Most Popular

close